![](http://songbad24.net/wp-content/uploads/2023/04/624.jpg)
আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা যেভাবে পুরোটা দিন মিরপুরে রাজ করল কোনো বিশেষণই যেন খাটে না তাতে। যেখানে ভাবা হচ্ছিল তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনেই খেলা শেষ হয়ে যাবে। সেখানে তৃতীয় দিন শেষে বেশ শক্ত অবস্থানে সফরকারীরা। ইনিংস ব্যবধানে হারের ঘোর শঙ্কায় থাকা ম্যাচটিতে ইতোমধ্যে বড় লিড পেয়ে গেছে আইরিশরা।
গতকাল (বুধবার) ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেই দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল আয়ারল্যান্ড। তবে তৃতীয় দিনে আজ (বৃহস্পতিবার) ব্যাট করতে নেমে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় আইরিশ ব্যাটাররা।
অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমে দলকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তুললেন লরকান টাকার। অভিষেক ম্যাচটা রাঙালেন শতরানে (১০৮)। ফিফটি পূর্ণ করেছেন হ্যারি ট্যাক্টর (৫৬)। এছাড়া ব্যক্তিগত ৭১ রানে অপরাজিত আছেন ম্যাকব্রেইন। তাদের লড়াকু ব্যাটে ভর করে একমাত্র টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে আইরিশদের সংগ্রহ ২৮৬ রান। লিড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩১ রান।
আগের দিন শেষ বেলায় ১৭ ওভার বোলিং করে ৪ উইকেট নিয়েছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন ৯০ ওভার বোলিং করে স্বাগতিকরা নিতে পেরেছে কেবল কেবল চার উইকেট! আগের দিন দুই উইকেট নেওয়া তাইজুল এদিন শিকার করেন আরও দুটি উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট পান যথাক্রমে এবাদত ও শরিফুল।
প্রথম ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের ২১৪ রানের জবাবে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে ৩৬৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের লিড দাঁড়ায় ১৫৫ রান। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেই তালগোল বাধিয়ে ফেলেন আইরিশ ব্যাটাররা। গোধূলীলগ্নে সাকিব-তাইজুলের তোপের মুখে স্কোরবোর্ডে ১৩ রান তুলতেই চার চারটি উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা। তবে এরপরের গল্পটা কেবল টাকার-ট্যাক্টরদের।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার ট্যাক্টর এবং মুর তৃতীয় দিনে দেখে-শুনে ভালোই খেলছিলেন। ঠাণ্ডা মাথায় খেলা এই দুইজনের ব্যাটে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ গড়ে সফরকারীরা। তবে ১৬ রানে থামতে হয় মুরকে। আক্রমণে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই এই ব্যাটারকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। এই পেসারের করা ৩৩তম ওভারের প্রথম বলটি খানিকটা খাটো লেন্থে ছিল। সেখানে পুল করতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে ধরা পড়েন মুর।
বাংলাদেশের পাওয়া প্রথম ইনিংসের লিডটা তখনো পাহাড়সমই ছিল আয়ারল্যান্ডের জন্য। তবে পঞ্চম উইকেটে জুটিতে সেই পাহাড় টপকানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তারা। ট্যাক্টর আর টাকার দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলেন। তবে দারুণ প্রতিরোধের পর ট্যাক্টর ৫৬ রানে আউট হলে ভাঙ্গে ৭২ রানের জুটি। ৫৭ তম ওভারের প্রথম বলটি অফ-মিডল স্টাম্পের ওপর গুড লেন্থে করেছিলেন তাইজুল, সেখানে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে সংযোগ করতে পারেননি এই ব্যাটার। ফলে লেগ বিফোরের আবেদন করলে আম্পায়ার আঙ্গুল তুলতে একটুও দেরি করেননি। পরে অবশ্য ব্যাটার রিভিউ নিয়েছিলেন কিন্তু তাতেও ফলে পরিবর্তন আসেনি।
ট্যাক্টর হাফ সেঞ্চুরি করে ফিরলেও আরেক প্রান্তে অবিচল ছিলেন টাকার। অথচ কে বলবে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেছেন এই ব্যাটার। এর আগে লিস্ট-এ ক্যারিয়ারে মাত্র একটি সেঞ্চুরি পাওয়া টাকার এদিন মিরপুরে দলকে খাদের কিনারা থেকে তুলে নিজের অভিষেক ম্যাচে ম্যাজিক ফিগারের দেখা পেলেন। সাদা পোশাকে আইরিশদের হয়ে তিনি দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান, এর আগে প্রথম সেঞ্চুরি ছিল কেভিন ও’ব্রায়ানের। তবে ব্যক্তিগত ১০৮ রানে টাকারকে ফিরিয়েছেন পেসার এবাদত হোসেন।
ফুল লেংথে করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল বেশ দূর থেকে ড্রাইভ করেন টাকার। কিছুটা লাফিয়ে দ্বিতীয় চেষ্টায় ক্যাচ নেন কভারে দাঁড়ানো শরিফুল ইসলাম। ১৪ চার ও ১ ছয়ে ১৬২ বলে ১০৮ রান করে ফিরেছেন আয়ারল্যান্ডের কিপার-ব্যাটসম্যান। তার বিদায়ে ভাঙে অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রেইনের সঙ্গে গড়া ১৭১ বলে ১১১ রানের সপ্তম উইকেট জুটি।
বল হাতে বাংলাদেশকে ভোগানো অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রেইন খেলছেন ৭১ রানে। তার ১৪৪ বলের চমৎকার ইনিংস গড়া আট চার ও এক ছক্কায়। গ্রাহাম হিউম ব্যাট করছেন ৯ রানে। অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেটে তারা ৫১ বলে গড়েছেন ২১ রানের জুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৬৯
আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৭/৪) ১০৭ ওভারে ২৮৬/৮ (ট্যাক্টর ৫৬, মুর ১৬, টাকার ১০৮, ম্যাকব্রেইন ৭০, অ্যাডায়ার ১৩, হিউম ; সাকিব ১৩-৪-২৬-২, তাইজুল ৩৮-১৫-৮৬-৪, মিরাজ ২৮-৭-৫৭-০, এবাদত ১২-১-৩৬-১, শরিফুল ৮-১-৩৫-১, খালেদ ৭-২-৩৮-০)