স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি ২০১৪-১৫ সালে ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। বিএনপি কি আবারও সেই অগ্নিসন্ত্রাসে ফিরে যাচ্ছে। শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হয়ে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অরাজকতা ও জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল (শুক্রবার) তারা একটি বড় কর্মসূচি দিয়েছিলেন এবং তার আগেও সারা বাংলাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের এনে জড়ো করেছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে, এখানে সরকারের কোনো বাধা নেই। তবে যখন কেউ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, জানমালের ক্ষতি করবে, কাউকে মারার চেষ্টা কিংবা হত্যা করবে অথবা গাড়ি ভাঙচুর করবে তখন নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। গতকাল দেখা গেছে বিএনপির সমাবেশ থেকে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় দেখেছি পুলিশ কখনো তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পেছনে ফিরে না। নিহত হবেন নাকি আহত হবেন– এসব বিষয়ে পুলিশ ভাবে না। জঙ্গি দমন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা তা দেখেছি। আজও পুলিশ বীরত্বের সঙ্গে সন্ত্রাস মোকাবিলা করেছে। বিগত ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের ডাক দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই অগ্নিসন্ত্রাস থেকে মানুষসহ জীবজন্তুরাও রক্ষা পায়নি। ওই অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে মানুষ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা আজ ঢাকাকে সারা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা নিয়েছিল। আমরা বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখেছি, তারা রাস্তায় অবস্থান করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে সব যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩১ জন পুলিশ সদস্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরও কয়েকটি হাসপাতালে আহত কয়েকজন পুলিশ সদস্য চিকিৎসা নিয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি মেহেদির ওপর বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়া হয়। কিন্তু তার বদলে যে একটা রিভেঞ্জ নেওয়া, সেটি কিন্তু তিনি বা পুলিশ করেনি। নীরবে তারা সহ্য করেছেন এবং তাদের পিছু হটতে বাধ্য করেছেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা বিগত ২০১৪-১৫ সালে দেখেছি অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে প্রধানমন্ত্রী অগ্নিদগ্ধদের সেবা দেওয়ার জন্য একটি হাসপাতাল করতে বাধ্য হয়েছেন। এত পরিমাণ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন, যার কারণে একটি হাসপাতাল করতে হয়েছিল। আজকের ঘটনা আমাদের সেই স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়। আবার কি তারা সেই প্রোগ্রাম নিচ্ছে কি না। আবারো কি ঢাকা অবরোধ করবে কি না, আবারও কি সেই অগ্নিসন্ত্রাসে ফিরে যাবে কি না। আবারো সেই মানুষকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারবে কি না, আবারও সেই প্রোগ্রাম তারা দিচ্ছে কি না।
তিনি বলেন, আমরা কিছুক্ষণ আগে বিএনপির এক নেত্রী নিপুণ রায়ের ফেসবুকের একটি অডিও শুনেছি। তিনি বলছেন, তোমরা আগুন ধরাও এগুলো আমাদেরকে দেখাতে হবে। জায়গা মতো দেখাতে হবে, জায়গাটা কোনটা সেটা তিনি নিজেই জানেন। দাউ দাউ করে আগুন জ্বালানোর হুকুম তিনি দিচ্ছেন। সব জায়গা থেকে বিএনপির নেতারা এ ধরনের কাজের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। আমরা এটার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। আমাদের পুলিশ, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটা পালন করবেন। এটা যেমন সত্য সেরকমভাবে আমি আহ্বান করব, তারা যেন ১৪-১৫ এর মতো জ্বালাও-পোড়াওয়ের যে নৃশংসতা ঘটিয়েছিল, তার যেন পুনরাবৃত্তি না করে। এগুলো ঘটালে আমাদের পুলিশ এবং আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীসহ দেশের মানুষ সহ্য করবে না।