বুলু আকন্দের স্বপ্ন ছিল, একদিন ছেলের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় যাবেন। ছেলে কোথায় পড়ে, কোথায় থাকে, নিজ চোখে দেখবেন। দেখতে দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে থেকে ছেলের স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে। স্বপ্নটা তবু আরাধ্যই ছিল। অবশেষে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে ছেলের সমাবর্তনের দিনে। এই দিনটির জন্য কত দীর্ঘ অপেক্ষা! কত পরিশ্রম, কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, তা শুধু দিনমজুর বুলু আকন্দ আর তাঁর ছেলে ওসমান গনিই জানেন।
অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে স্কুল-কলেজে পড়িয়েছেন। ভর্তি করিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবা যে খরচ পাঠাতেন, ওসমানের জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। তাই টিউশনি করে ওসমান নিজের খরচ চালিয়েছেন, সঙ্গে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছেন, একদিন বাবাকে ঢাকা শহর ঘুরিয়ে দেখাবেন বলে। বাবার যে কখনো ঢাকা দেখা হয়নি!
সমাবর্তনের মাস দুয়েক আগে ওসমান ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। দুই মাস বন্ধ থাকে টিউশনি। জমানো টাকা ভাঙিয়ে মাসের খরচ চালাতে হয়। এদিকে সমাবর্তনের ফি ৪ হাজার ৩০০ টাকা। ওসমানের সামনে তখন দুটো পথ ছিল—হয় বাবাকে ঢাকায় আনবেন, নয়তো সমাবর্তনে যোগ দেবেন। ওসমান প্রথমটিই বেছে নেন।
সমাবর্তনের ফি জমা না দিয়ে বাবাকে রাজধানীতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। সহপাঠীদের কাছ থেকে গাউন ধার করে বাবার সঙ্গে ছবি তুলেছেন, এটুকুই তাঁর বড় পাওয়া। এই ছবি ফেসবুকে তুলে দিয়ে ওসমান লিখেছিলেন, ‘আমাকে গড়ার মূল কারিগর—বাবা, আজ আমার ক্যাম্পাসে। ৫৩তম সমাবর্তন, ঢাবি।
সংবাদটি শেয়ার করুন,