
‘মাত্র ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ডেই সাভারের পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের ধসে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদটি ধসে পড়ে। কেউ বুঝে ওঠার আগেই বিষয়টি ঘটে যায়।’
শনিবার (১১ মার্চ) গাজীপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেখানকার নির্মাণশ্রমিক মো. খাইরুল ইসলাম (২৭) রাইজিংবিডির কাছে জানিয়েছেন সেই ঘটনার কথা।
মো. খাইরুল ইসলাম জানান, পাঁচ দিন আগে ওই ভবনের নির্মাণকাজে যোগ দেন তিনি। শুক্রবার সারাদিনই ভবনের নির্মাণকাজে ছিলেন। বিকেলের দিকে চলছিল দশম তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ। সেখানে কাজ করছিলেন ৩০-৪০ জন শ্রমিক।
এরিমধ্যে ৪টার দিকে হঠাৎ ছাদের তিন ভাগের দুই ভাগ ধসে পড়ে। এতে ২০-২৫ জন শ্রমিক দশম তলার নির্মাণাধীন ছাদ থেকে নবম তলায় ছিটকে পড়েন। সেখানেই ছিলেন খাইরুল নিজেও। এতে অনেকের সঙ্গে তিনি আহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে-সহ অন্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ৫০৪ নম্বর কক্ষে চিকিৎসা নিচ্ছেন খাইরুল। তার ডান চোখের ওপরের অংশ কেটে যাওয়ায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। ডান হাত ও ডান পায়ের বিভিন্ন অংশে জখম হয়েছে। এছাড়া আরেক আহত ইয়াকুব আলী চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫০৬ নম্বর কক্ষে। শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খাইরুল ইসলাম বলেন, পুরো ঘটনাটি মাত্র ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যায়। সেন্টারিংয়ে সমস্যার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে।
আহত ইয়াকুব আলী বলেন, পাঁচ মাস আগে মিস্ত্রি হিসেবে ভবনে কাজে যোগ দেন তিনি। শুক্রবার ছাদ ঢালাইয়ের সময় ঢালাই সমান করার কাজ করছিলেন তিনি। ছাদের যে অংশে তিনি কাজ করছিলেন, ঠিক সে অংশটিই ধসে পড়ে।
এই শ্রমিক বলেন, আমাদের সবার পায়ে বুট ও মাথায় নিরাপত্তা হেলমেট থাকায় গুরুতর আহত হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছি। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমাদের চিকিৎসা-ব্যয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টার লাইট থেকে বহন করা হচ্ছে।
এদিকে, সকাল ১০টার দিকে উপজেলার গনকবাড়িতে অবস্থিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ছাদ ধসে পড়া ভবনের সামনে অলস বসে আছেন কয়েকজন শ্রমিক। ধসে যাওয়া সেই ছাদ পড়ে আছে একইভাবে। সেখানে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়নি।
বেলা ১১টার দিকে ধসে পড়া ভবনটি পরিদর্শনে আসেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
ভবনের নির্মাণকাজে গাফিলতি ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া এতে কার কার সম্পৃক্ততা আছে সেটিও খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
এসময় তার সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান, পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক দেবাশীষ পাল, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্পের পরিচালক মো. মঞ্জুর আহসান। শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকেলে ভবনটির ১০ তলা নির্মাণাধীন ছাদ ধসে যায়। এতে একজন গুরুতরসহ প্রায় ১৫ জন শ্রমিক আহত হন।