বয়সের বেশি সময় কেটেছে ভিক্ষা করে শুকনি বেওয়ার। মানুষ না দিলে তার পেটে খাবার জোটে না। তাই খাবার কষ্টে তাকে ভিক্ষের ঝুলি হাতে নিয়ে কাকডাকা ভোরে হেঁটেই রওনা দেন শহরে। অনেক শীত পাড়ি দিয়েছেন ঘরে বসে থেকে আর খড় কুটোর আগুন জ্বালিয়ে। তার কষ্ট সবাই জানে কিন্তু ভাগ্যে জোটে না শীতের কাপড়। একটা কম্বলের জন্য চেয়ারম্যান মেম্বারদের বাড়িতে কতোদিন গেছেন তার হাতে গোনা যাবে না। শীত কাটে খুব কষ্টে। মাঘের শীত ও বর্ষায় একটা ছেড়া কাঁথা তার সম্বল। প্রতি শীত আসে, আসে কম্বল। কিন্তু ৫০ বছর কেটে গেছে তবু শুকনি বেওয়ার কপালে জোটেনি একটা কম্বল।
ভাঙা টিনের চালা দিয়ে টপ টপ করে কুয়াশার ফোটা পড়ে কাঁথা ভিজে যায়। কনকনে ঠাণ্ডায় বসে- শুয়ে থাকতে হয় তার ডেড়ায়। তবু সরকারি বেসরকারি শীতবস্ত্র জোটেনি তার কপালে। একথাগুলো তিনি বলছিলেন অনেক আক্ষেপ করে। গাইবান্ধা শহর থেকে ভিক্ষার পোটলা বোগলদাবা করে ডেড়ায় ফেরার পথে রথেরবাজার এলাকায় রাস্তায় তার সঙ্গে দেখা মেলে। জিঞ্জেস করতেই তিনি বলেন, কোটে পাবেন বাবা শীতের কাপড়? ঘরত যায়া দেখেন একান খ্যাতা ছাড়া কিছুই নাই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তিনি তার জীবনের অনেক দুঃসহ বেদনার কথা জানালেন। এত শীত পড়ছে হামার গাওত দেওয়ার মতো একান কম্বলও নাই। গায়ের কাপড় মুড়ি দিয়া শীত কাটাই । ১৯৭৪-এ আকালের সময় থেকে শুকনি বেওয়া ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে শহরে যায়। কাঁকডাকা ভোরে আগের রাতের বাসি ভাত খেয়ে শহরের এবাড়ি ওবাড়ি ভিক্ষা করে যা পায় তাই এনে ডেড়ার সামনে বসে রান্না করে। চেয়ে চিন্তে বিছানার খড় সংগ্রহ করলেও গায়ে দেয়ার মতো একটা ছেড়া কাঁথা ছাড়া আর কিছু নেই। তাই এ বছরেও শীতের রাতে ঘুমোতে পারেন না তিনি। গ্রামের সবাই তার কষ্টের কথা জানে। চেয়ারম্যান-মেম্বর সবাই জানে। কিন্তু আশেপাশে দিলেও শুকনি বেওয়ার কপালে জোটে না। তারা বলেন, তার তো খাওয়ার মানুষ নাই, তার কম্বলেরও দরকার নাই । খোলাহাটি ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম হক্কানী বলেন, আমরা ঘরে ঘরে কম্বল দিয়েছি। তবে শুকনি বেওয়া কম্বল পেলো না কেনো বিষয়টি জরুরিভাবে আমরা দেখবো।
সংবাদটি শেয়ার করুন