
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ২ দালালকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানকালে দুদক টিমকে দেখে পালিয়ে যায় পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মচারী।
কর্মচারী ও দালাল সিন্ডিকেট মিলে পাসপোর্ট অফিসকে ঘুষের হাটে পরিণত করেছে এমন অভিযোগে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অভিযান চালায় দুদক। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। আর অভিযানে এমন অনিয়মের প্রমাণ পায় টিম।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আারিফ সাদেক অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযান সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গ্রাহককে পাসপোর্ট সেবা প্রদানে ঘুষ দাবি ও হয়রানি করার অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। এ অভিযানে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট টিম। এ সময় ২ জন দালালকে প্রমাণসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া অভিযান পরিচালনার সময় অফিস থেকে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী পালিয়ে যান।
পরে দুই দালালকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ১০ দিন করে কারাদণ্ড দেন। টিম অভিযোগের বিষয়ে কিছু দালিলিক রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে।
অভিযোগ আছে, পাসপোর্ট অফিসের কোনো কাজই দালাল ছাড়া হয় না। অফিসের চিহ্নিত কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে অর্ধশত দালালের সিন্ডিকেটে এমন দৌরাত্ম্য চলছে বছরের পর বছর। সরকারি নিয়ম মেনে পাসপোর্টের ফরম জমা দিতে পারলেও সময়মত পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। শুধু দালালদের হাতে টাকা তুলে দিলেই পাসপোর্ট পাওয়া যায়। হোক না রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি। টাকায়ই মিলছে পাসপোর্ট সেবা। এভাবে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অর্ধশত দালাল রোহিঙ্গা ও গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের পাসপোর্ট বানানোর নামে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্টের আবেদন করলে আবেদন ফরমে বিশেষ কিছু চিহ্ন থাকে যেমন-স্টার, টিক, ডি, এফ, ও। পাসপোর্টের আবেদনগুলোতে ‘বিশেষ চিহ্ন’ আছে কি না যাচাই করে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীরা। এরপর ওই চিহ্নের পাশে আরেকটি ‘চিহ্ন’ব্যবহার করেন তারা। মূলত এই বিশেষ চিহ্নের মাধ্যমে পাসপোর্টের কাজ শুরু করেন তারা। এরপর দালালদের কাছ থেকে সপ্তাহে বা মাসে ঘুষের চাহিদামত টাকা বুঝে নেন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার শাখাওয়াত হোসাইন, অফিস সহায়ক মো. সাদ্দাম হোসাইন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. খাদেমুল ইসলাম। প্রতিটি পাসপোর্ট থেকে সরকারি নির্দিষ্ট ফির বাইরে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা ও নাম বা বয়স সংশোধন করতে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।