তিস্তা থেকে পানি সরিয়ে নিতে নতুন করে খাল বানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ

তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দু’টি খাল খননের জন্য প্রায় এক হাজার একর পরিমাণ জমির মালিকানা পেয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের সেচ বিভাগ। কৃষি কাজের জন্য তিস্তা থেকে পানি সরিয়ে নিতে সেচ বিভাগকে এই জমির মালিকানা দিয়েছে রাজ্য সরকার।

শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে বলে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলার আরও অনেক জমিকে সেচের আওতায় আনতে সাহায্য করবে। তবে এই সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষুব্ধ হতে পারে বাংলাদেশ। শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে পানি কমে যাবে।

উত্তরাঞ্চলের পানি সংকট নিরসনে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন প্রায় ১ হাজার একর জমির মালিকানা সেচ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে।

এই জমি তিস্তার বাম তীরে দু’টি খাল তৈরি করতে প্রশাসনকে সহায়তা করবে। জলপাইগুড়ি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আরেক নদী জলঢাকার পানির প্রবাহও সেচের জন্য খালের মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া যাবে।

সেচ বিভাগের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ বলেছে, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিস্তা এবং জলঢাকা থেকে পানি সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করা হবে। তিস্তার বাম তীরে নির্মিত হবে আরও একটি খাল; যার দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার।’

প্রশাসনিক সূত্র বলেছে, খাল দু’টি খনন করা হলে প্রায় এক লাখ কৃষক সেচের সুবিধা পাবেন। ব্যারাজটি জলপাইগুড়ি জেলার গাজলডোবায় অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, খালের মাধ্যমে মোট কত পরিমাণ জমি উপকৃত হবে, তা সেচ বিভাগ যথাসময়ে মূল্যায়ন করবে।

১৯৭৫ সালে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প উত্তরবঙ্গের ৯ লাখ ২২ হাজার হেক্টর কৃষি জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়ে চালু করা হয়েছিল। তিস্তা থেকে নদীর উভয় তীরের খালের জমিতে পানি সেচের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ওই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অন্যান্য নদীর পানিও খালে সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়।

তবে কয়েক দশক ধরে এই প্রকল্পটি নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এর মাধ্যমে মাত্র ১ লাখের কিছু বেশি হেক্টর জমিতে পানি পৌঁছাতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক শুক্রবার বলেছেন, ‘জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন খাল খননের জন্য আমাদের কাছে ১ হাজার একর জমি হস্তান্তর করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এটিকে জাতীয় প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করলেও (২০০৯ সালে) তহবিল সরবরাহ করছে না। আমরা তহবিল না পেলেও পর্যায়ক্রমে (খালের নেটওয়ার্ক তৈরির) কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।’

জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি ব্লকে আরেকটি খাল মেরামত করবে সেচ বিভাগ। সূত্র বলেছে, এই খালটি চালু হয়ে গেলে ব্লকের ৩২ হাজার একর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে।

টেলিগ্রাফ বলছে, ২০ বছরেরও বেশি সময় পর তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন করে খাল খননের সিদ্ধান্ত ঢাকাকে ক্ষুব্ধ করে তুলবে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে নয়াদিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হয়নি।

ভারতের একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেছেন, তিস্তা প্রকল্পের আওতা বাড়িয়ে মমতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, উত্তরবঙ্গের জন্য নদীর পানি দরকার।

শিলিগুড়ির নর্থ বেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেছেন, মমতার সরকার এখন সেচ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। ফলে তিস্তা থেকে আরও বেশি পানি নতুন খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হবে, সেটা স্পষ্ট। এর অর্থ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ কম পানি পাবে।

সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ বলেছে, গ্রীষ্মের সময় তিস্তায় প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ ঘনমিটার পানির প্রবাহ থাকে। ভারত ও বাংলাদেশ— উভয় দেশে ওই সময় কৃষি জমিতে সেচের জন্য প্রায় এক হাজার ৬০০ ঘনমিটার পানিপ্রবাহের প্রয়োজন হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *