লঙ্কানদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয়ের পর টানা ছয় ম্যাচে হারায় সবার আগে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে টাইগাররা। এমন ভরাডুবিতে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে লাল-সবুজ দল খেলতে পারবে কিনা তা নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা। সেই শঙ্কা মাথায় নিয়েই আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে চারিথ আসালঙ্কার শতকে ৪৯.৩ ওভারে ২৭৯ রান তুলে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ২৮০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিবের রেকর্ড ১৬৯ রানের জুটিতে ভর করে ৫৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটের জয় তুলে নেয় টাইগাররা। ফলে দীর্ঘ ৬ ম্যাচ পর জয়ের ধারায় ফিরে এখনো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা বেঁচে রয়েছে টাইগারদের।

আজকের ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এক পা দিয়ে রাখবে বাংলাদেশ। এমন সমীকরণের দিনে লঙ্কানদের দেওয়া ২৮০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম দুই ওভারে আগ্রাসী সূচনা করে টাইগাররা। বিনা উইকেটে ১৭ রান তুলে ঝড়ো শুরুর আভাস দেন লিটন দাস ও তানজিদ তামিম।

কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে মাত্র ৯ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তরুণ ওপেনার তামিম। দলীয় ১৭ রানের টাইগার শিবিরে প্রথম আঘাত হানলেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। তামিম ফিরে গেলেও দলের রানের চাকা সচল রাখেন লিটন দাস। এই ডানহাতি ব্যাটারের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৬ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৪১ রান তুলে টাইগাররা। তবে ইনিংসের সপ্তম ওভারে নিজের এবং দলের দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন বাঁহাতি পেসার মাদুসাঙ্কা। লেগ বি ফোরের ফাঁদে পড়ে ব্যক্তিগত ২২ বলে ২৩ রান করে সাজঘরে ফিরেন লিটন।

তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসান। এই দুই বাঁহাতি ব্যাটার মিলে লঙ্কান বোলারদের দেখেশুনে খেলতে থাকেন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

এরপর মিডেল অভারেও দুজন খেলে যাচ্ছেন রানের গতি সচল রেখে। ১৮তম ওভারে দলীয় শতরান পূরণ করেন সাকিব-শান্ত। বিশ্বকাপে টাইগারদের টপ অর্ডারদের ব্যর্থতায় যখন চারিদিকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন শান্ত-সাকিব।

দলীয় শতরান পূরণের পর লঙ্কান বোলারদের উপর চড়াও হন দুজন। তাদের বিধ্বংসী জুটি ২৩তম ওভারেই শতরানের পার্টনারশিপ পূরণ করেন। দুজনেই তুলে নেন তাদের অর্ধশতক। সাকিব তার এবারের বিশ্বকাপের প্রথম অর্ধশতকের দেখা পান। ৩০তম ওভারে দলীয় ২০০ রান পূরণ করে বাংলাদেশের জয়ের ভীত গড়ে দেন এই দুই ব্যাটার।

৩২তম ওভারে ১৬৯ রানের বিশাল জুটি ভাঙেন অ্যাঞ্জেলা ম্যাথিউস। ৬৫ বলে ৮২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে জয়ের ভীত গড়ে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন সাকিব। নিশ্চিত শতকের দ্বারপ্রান্তে থাকা শান্ত ব্যক্তিগত ৯০ রান করে আক্ষেপকে সঙ্গী করে ম্যাথিউসের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন। শেষ দিকে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ২২ রান ও তাওহীদ হৃদয়ের ১৫ রানে দলের জয় নিশ্চিত করে। ৪২তম ওভারে ৫৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটের জয়ে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা। তবে শুরুটা ভালো করতে পারেননি লঙ্কানরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই টাইগারদের আনন্দে ভাসান শরিফুল ইসলাম। ওভারের শেষ বলে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন কুশল পেরেরা। আউট হবার আগে মাত্র ৪ রান করেন এই ব্যাটার।

তবে দ্বিতীয় উইকেটে শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। পাওয়ার প্লের বাকিটা সময় নির্বিঘ্নে কাটান দুজন, গড়েন পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি। ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা এই জুটি ভাঙেন টাইগার অধিনায়ক। দলীয় ৬৬ রানে লঙ্কান অধিনায়ক ফেরেন ১৯ রানে।

সঙ্গীর বিদায়ের পর দ্রুত সাজঘরে ফেরেন নিশাঙ্কাও। দলীয় ৭২ রানে বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া তানজিম সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেন ৪১ রান। এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালঙ্কা।

দুই মিডেল অর্ডার ব্যাটার মিলে বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন। ক্রমেই বিধ্বংসী হয়ে উঠা জুটি ২৫তম ওভারে ভাঙেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। দলীয় ১৩৫ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে সাদিরা সাজঘরে ফিরে গেলে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। তবে সেই ওভারেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে ভিন্ন রকম এক ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫তম ওভারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইমড আউট হয়েছেন ম্যাথিউস। কোনো বল খেলার আগেই টাইমড আউট হয়ে গেছেন তিনি। যে হেলমেট নিয়ে নেমেছিলেন, তাতে পুরো নিরাপদ বোধ করেননি তিনি। ফলে আরেকটি হেলমেট আনা হয়, কিন্তু সেটিও উপযুক্ত মনে করেননি এই ব্যাটার। এসবের মাঝে সময় গড়াতে থাকে, ফলে টাইগার অধিনায়ক সাকিব আবেদন করলে আম্পায়াররা আউট ঘোষণা দেন।

ফলে কোন বল না খেলেই সাজঘরে ফিরেন ম্যাথিউস। দলীয় ১৩৫ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটলেও দলের রানের চাকা সচল রাখেন চারিথ আসালঙ্কা।

শেষ দিকে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও মাহিথ থিকসানাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীলঙ্কার বড় রানের পুঁজি নিশ্চিত করেন আসালঙ্কা। সেই সঙ্গে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ শতক। এই বাঁহাতি ব্যাটারের শতকে ভর করে ৪৯.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রানের সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ১০৮ রান করেন আসালঙ্কা। টাইগারদের হয়ে ৩টি উইকেট নেন তানজিম সাকিব। ২টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *