কি আশ্চর্য! এলিমিনেটরে মাঠে নামার আগে রাউন্ডরবিন লিগের শেষ ম্যাচে আবার হারের তেতো স্বাদ পেল রংপুর রাইডার্স আর ফরচুন বরিশাল। সাকিবের বরিশাল শুক্রবার রাতে ৬ উইকেটে পরাজিত হলো পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকে থাকা খুলনা টাইগার্সের কাছে।
আর নুরুল হাসান সোহানের দল রাউন্ড রবিন লিগ শেষ করলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে ৭০ রানের বড় ব্যবধানে হেরে। সেই পরাজয়ের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই চলে এসেছে এলিমিনেটর পর্ব।
রোববার দুপুরে নকআউট পর্বেই মুখোমুখি সাকিবের ফরচুন বরিশাল আর নুরুল হাসান সোহানের রংপুর রাইডার্স। হোম অব ক্রিকেট শেরে বাংলায় দুপুর দেড়টায় শুরু হবে এলিমিনেটরের সেই জমজমাট লড়াই।
এলিমিনেটর মানেই ‘সাডেন ডেথ।’ হারলেই বিদায়। আর বিজয়ী দল খেলবে কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি সিলেট ও কুমিল্লার পরাজিত দলের বিপক্ষে। ৭ দলের আসরে তৃতীয় স্থান পাওয়া রংপুর (১২ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট) ও চতুর্থ হওয়া বরিশাল (১২ ম্যাচে ১৪) নকআউট পর্বে মাঠে নামার আগে সতর্ক ও সাবধানি। দু’দলের ম্যানেজমেন্টই নড়ে চড়ে বসেছেন।
এর মধ্যে শেষ ম্যাচে কুমিল্লার কাছে ৭০ রানে হেরে দলে ঢালাও পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে রংপুর ম্যানেজমেন্ট। শক্তি বাড়াতে শেষ মুহূর্তে তারা দলে ভেড়াচ্ছেন চার ভিনদেশি নামী তারকা। ডোয়াইন ব্রাভো, মুজিবুর রহমান, দাসুন সানাকা ও নিকোলাস পুরানকে।
এর মধ্যে দাসুন সানাকা ও মুজিবুর রহমান আজ শনিবার সকালেই এসে গেছেন। শনিবার রংপুরের সাথে প্র্যাকটিসেও যোগ দিয়েছেন সানাকা ও মুজিব। আর দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ড্রোয়াইন ব্রাভো ও নিকোলাস পুরান আসবেন শনিবার রাতে।
এদিকে শেষ মুহূর্তে খেলোয়াড় টানার কাজে ব্যস্ত বরিশাল ম্যানেজমেন্টও। পাকিস্তানি মিডল অর্ডার ইফতিখার আহমেদের অভাব মেটাতে আজ শনিবার সকালে দলের সাথে যুক্ত হয়েছেন লঙ্কান মারকুটে মিডল অর্ডার ভানুকা রাজাপাকশে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ৫ জনই আরব আমিরাতের ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর খেলছিলেন। তাদের নিজ নিজ দল বিদায় নেয়ার পর তারা ফ্রি হয়ে বিপিএল খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
এদিকে ফরচুন বরিশাল আগের দিন খুলনার কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হারলেও সেই ম্যাচে দলের সাথে যোগ দেয়া দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস প্রথম ম্যাচেই জ্বলে উঠেছেন। এ প্রোটিয়া খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ২৯ বলে খেলেছেন ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। যাতে ছিল ৪টি বড় ছক্কার মার।
তার সাথে যুক্ত হবেন ভানুকা রাজাপাকশে। এছাড়া দুই আফগান ইব্রাহিম জাদরান (প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার) ও পেস বোলিং অলরাউন্ডার করিম জানাত এবং লঙ্কান স্পিনিং অলরাউন্ডার চতুরঙ্গ ডি সিলভা আগে থেকেই দলের সঙ্গী। সব মিলিয়ে দুই পাকিস্তানি শোয়েব মালিক ও হারিস রউফ পিএসএল খেলতে দেশে ফেরার পর তাদের জায়গা পূরণের প্রাণপন চেষ্টা করেছে সাকিবের দল।
রাউন্ড রবিন লিগের দু’বারের সাক্ষাতে বরিশালের সাথে একবারও পারেনি রংপুর। দুবারই সহজে জিতেছে সাকিবের দল। প্রথমবার ১০ জানুয়ারি মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ৬ উইকেটে জিতেছে সাকিবের বরিশাল। ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে বরিশাল জিতেছে ৬৭ রানে।
সাকিব আল হাসান (৪৩ বলে ৮৯*) আর পাকিস্তানী ইফতিখার আহমেদ (৪৫ বলে ১০০) রেকর্ড ১৯২ রানের জুটিতে জয়ের ভিত পায় বরিশাল। কাজেই রাউন্ড রবিন লিগের পারফরমেন্স ও ফলকে মানদন্ড ধরলে সাকিবের দলের গযে ফেবারিটের তকমা। কিন্তু পাকিস্তানিরা পিএসএল খেলতে চলে যাওয়ার পর খেলোয়াড় সংগ্রহ ও শক্তির পালাবদলের পালায় বরিশালের চেয়ে রংপুরের পাল্লা হয়েছে ভারি।
নুরুল হাসান সোহানর দলে যে ৪ জন যুক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ‘স্পিন বোলিং মিস্ট্রি মুজিব ও অতি কার্যকর এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সারা বিশ্বে সর্বাদিক উইকেট শিকারী ডোয়াইন ব্রাভোর অন্তর্ভুক্তিতে রংপুরের শক্তি বেড়েছে বেশ। সাথে লঙ্কান দাসুন সানাকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান নিকোলাস পুরান যোগ দিলে রংপুর হয়ে উঠবে আরও শক্তিশালী।
অন্যদিকে সাকিবের বরিশাল এগুচ্ছিল ভালোই। দুই পাকিস্তানী হারিস রউফ আর ইফতিখার ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে দলকে ছন্দ উপহার দিয়েছিলেন; কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পর শেষ ২ ম্যাচে সাকিবের দল তাদের অভাব মেটাতে পারেনি। তাই কুমিল্লা (৫ উইকেটে) ও খুলনার (৬ উইকেটে) বিপক্ষে শেষ ২ ম্যাচে পরাজয় সঙ্গী সাকিবের দলের।
সন্দেহ নেই, এলিমিনেটরের যুদ্ধে মাঠে নামার আগে সোহানের রংপুর শিবির হয়েছে সুসজ্জিত। এখন সাকিবের বরিশাল মাঠে তাদের কিভাবে মোকাবলা করে অনেক সাফল্যের রূপকার সাকিব দলকে টেনে তুলতে পারেন কি না সেটাই দেখার।