রুদ্ধশ্বাস লড়াই করে জিম্বাবুয়েকে হারালো বাংলাদেশ

টানা তিন জয়ের পর চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের কাছে প্রায় হারতে বসেছিল বাংলাদেশ। মান বাঁচালেন বোলাররা। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষ ওভারে ৫ রানে জিতলো বাংলাদেশ।

শেষ ২ ওভারে জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল মোটে ২১ রান। ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান দারুণ বোলিং করে মাত্র ৭ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। শেষ ওভারে দরকার ১৪। পেসারদের কোটা শেষ। সাকিব আল হাসানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

সাকিবের প্রথম বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ওয়েলিংটন মাসাদাকাদজা। আগের ওভারেই দারুণ এক ক্যাচ নেওয়া তানজিদ তামিম ফেলে দেন এবার। পরের বলে মুজারবানি রান নিতে না পারলেও তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন।

৩ বলে দরকার ৭। হাতে ২ উইকেট। জিম্বাবুয়ের তখনও জেতার সুযোগ ছিল। তবে সাকিব নিজের মেধার সবটুকু খাটিয়েই যেন হারিয়ে দিলেন প্রতিপক্ষকে। চতুর্থ বলে মুজারবানির মুভমেন্ট দেখে অফসাইডে ওয়াইড দেন সাকিব। এগিয়ে আসা মুজারবানি হন স্টাম্পিং। পরের বলেই রিচার্ড এনগারাভাকে বোল্ড করে দলকে জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৪৪ রানের। ছোট পুঁজি নিয়ে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। তার শর্ট ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে মিডঅনে সাকিবের দুর্দান্ত নিচু ক্যাচ হন ব্রায়ান বেনেট (০)।

মারমুখী শুরু করেছিলেন সিকান্দার রাজা। তাকেও দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন তাসকিন। ১০ বলে ১৭ করে ফেরেন জিম্বাবুইয়ান অধিানয়ক।

এরপর সাকিবের আঘাত। তানিওয়াশে মারুমানিকে(১৩ বলে ১৪) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে।

সেখান থেকে ক্লাইভ মাদান্দে আর জোনাথান ক্যাম্পবেলের প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা। ইনিংসের দশম ওভারে সেই জুটিটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। তার ঘূর্ণি বলে রিভার্স খেলতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হন মাদান্দে (১৮ বলে ১২)।

তার এক বল আগেই আউট হতে পারতেন ক্যাম্পবেল। ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তাওহিদ হৃদয়। পরের ওভারে আরও এক ড্রপ। এবার তানজিম সাকিবের বলে সোজা আকাশে তুলে দিয়েছিলেন রায়ান বার্ল। কিন্তু দৌড়ে গিয়ে জাকের আলী ক্যাচটা গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি।

৫৭ রানে জিম্বাবুয়ের ৪ উইকেট তুলে নিয়েও স্বস্তিতে ছিল না বাংলাদেশ। জীবন পেয়ে পঞ্চম উইকেটে জোনাথান ক্যাম্পবেল আর রায়ান বার্ল গড়েন ৩০ বলে ৩৫ রানের জুটি। অবশেষে দলীয় ৯২ রানে এই জুটিটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান।

১৫তম ওভারে জোড়া শিকার করেন কাটার মাস্টার। বার্ল (২০ বলে ১৯) বড় শট খেলতে গেলে মিডঅনে দারুণ ডাইভিং ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। লুক জঙউই (১) ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন রিশাদের হাতে। একশর আগে (৯৪) রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ে জিম্বাবুয়ে।

তবে ক্যাম্পবেল একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন। ২৭ বলে ৩১ করে তিনি শেষ পর্যন্ত হন সাকিবের শিকার। জিম্বাবুয়ের সব আশা ভরসা শেষ হয়ে যায় তাতেই।

সাকিব ৩৫ রানে দিয়ে নেন ৪টি উইকেট। ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার মোস্তাফিজের।

এর আগে শতরানের ওপেনিং জুটির পর নাটকীয় ব্যাটিং ধসে ৪২ রানে ১০টি উইকেট হারায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। স্বাগতিক দল ১৯.৫ ওভারে অলআউট হয় ১৪৩ রানে।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং পায় বাংলাদেশ। অফফর্মে থাকা লিটন দাস একাদশে নেই। তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন সৌম্য সরকার।

ঝড়টা অবশ্য তানজিদ তামিমই তোলেন। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে যে ৫৭ রান তোলে বাংলাদেশ, তার মধ্যে ৪১ রানই তামিমের। এই রান তিনি করেন ২৭ বল খেলে। সৌম্য কেবল সাপোর্ট দিয়ে গেছেন পাওয়ার প্লেতে।

দুজন দারুণ খেলে গেছেন এরপরও। ১১ ওভারে বিনা উইকেটে ১০০ করে বাংলাদেশ। তবে ১২তম ওভারে এসে জোড়া ধাক্কা। লুক জঙউই ভাঙেন ৬৮ বলে ১০১ রানের ওপেনিং জুটি।

মারকুটে তামিম ৩৪ বলে ফিফটি করেন। তবে ফিফটির পর ইনিংস আর বড় করতে পারেননি। ৩৭ বলে ৭ চার আর ১ ছক্কায় ৫২ রান করে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন তিনি। ওই ওভারেই তার আরেক সঙ্গী সৌম্য এলবিডব্লিউ হন। ৩৪ বলে ৪১ রানের ইনিংসে ৩টি বাউন্ডারি আর দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি।

তাওহিদ হৃদয় শুরুটা করেছিলেন ভালো। কিন্তু এবার ৮ বলে ১২ রানেই সিকান্দার রাজার ঘূর্ণিতে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় তাকে। পরের ওভারে সাকিব আল হাসান ৩ বলে ১ করে বোল্ড হন বেনেটের বলে।

অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দলকে বাঁচাবেন কী, ওই ওভারেই বোল্ড হন তিনিও। ৭ বলে অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ২ রান।

বিনা উইকেটে ছিল ১০১। সেখান থেকে আর ২২ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ১২৩ রানে ৫ উইকেট খোয়ানোর পর জাকের আলিও হাল ধরতে পারেননি। ৭ বলে ৬ করে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টাইগাররা।

জিম্বাবুয়ের লুক জঙউই ২০ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। ২টি করে উইকেট নেন রিচার্ড এনগারাভা আর ব্রায়ান বেনেট।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *