আশঙ্কাই সত্যি হলো শেষ পর্যন্ত। মুশফিকুর রহিমের দ্রুততম সেঞ্চুরি এবং ওয়ানডেতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহের ম্যাচটা ভেস্তে গেল বৃষ্টিতে। কাগজে-কলমে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড হলেও এদিন যেন বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৃষ্টি। ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার কাট-অফ টাইম ছিল ৯টা ৩৩ মিনিট। তবে এর ঘণ্টাখানেক আগেও থামেনি বৃষ্টি। স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩২ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
সোমবার (২০ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মন্থর শুরুর পর লিটন-শান্তদের ব্যাটে বড় সংগ্রহের পথেই ছিল স্বাগতিকরা। তবে এদিন সব আলো কেড়ে নিয়েছেন মুশফিক। বাংলাদেশি হিসেবে সবচেয়ে দ্রুততম এবং তার ব্যক্তিগত নবম সেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের যা সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ডও।
এতবড় টার্গেট তাড়া করে জিততে হলে অসাধ্য কিছুই করতে হতো আইরিশদের। অন্যদিকে, কোনো অঘটন না ঘটলে নিশ্চিত আরেকটা বড় জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের।
প্রথম ইনিংস শেষেই বৃষ্টির দাপট শুরু হয় সিলেটে। যা অনবরত চলছে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সাড়ে ৮টা)। বৃষ্টির বাগড়ার পর কাট-অফ টাইম নিশ্চিত করা হয়েছিল ৯ টা ৩৩ মিনিট। এই সময়ের মধ্যে খেলা শুরু করা গেলে ২০ ওভারে আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়াতো ১৮৫ রান। কেননা, দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ রাত ১১টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। এছাড়া সর্বনিম্ন ২০ ওভার খেলা মাঠে গড়াতে হতো। নইলে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে পড়বে না ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির পেটে গেল সব সমীকরণ।
সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এদিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমে একের পর এক মাইলফলক আর রেকর্ড। যার শুরুটা করেছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। নিজের ৩৪ তম জন্মদিনটা ব্যাট হাতে রাঙাতে না পারলেও এদিন ছুঁয়েছেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৫ হাজার রানের মাইলফলক।
তামিমের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন লিটন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। লিটন তুলে নেন ওয়ানডেতে নিজের নবম অর্ধশতক। সেই সঙ্গে পেরিয়েছেন ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত ২ হাজার রানের মাইলফলক। যদিও সেঞ্চুরির আভাস দিয়ে কার্টিস ক্যাম্পারের বলে সহজ ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ৭০ রান করে।
লিটন ফিরে গেলেও অবিচল ছিলেন শান্ত। এ সময় বাঁ-হাতি এই ব্যাটার আইরিশ বোলারদের নিয়েছেন কঠিন পরীক্ষা। অবশ্য গেল ম্যাচের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাকিব আল হাসান এদিন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। শুরু থেকে মারমুখী ভঙ্গিতে খেললেও সাকিব মাত্র ১৭ রান করে আউট হয়ে যান। তবে অন্যপ্রান্তে থাকা শান্ত তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক।
এরপরও দেখেশুনে খেলতে থাকা টপ অর্ডার এই ব্যাটার ৭৩ রানে কাটা পড়েন। তার বিদায়ে বাংলাদেশের বড় রানের সংগ্রহে ছেদ পড়ে। শঙ্কা তৈরি হয় প্রথম ম্যাচের ন্যায় ভালো টার্গেট দাঁড় করাতে পারবে কি না। তবে সেই চাপ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিক। এই দুই ব্যাটার মিলে বেশ জোরেশোরে না তুলতে থাকেন। দুই ব্যাটারই খেলতে থাকেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে। তারা আইরিশ বোলারদের পিটিয়ে নাভিশ্বাস তুলেন।
মারমুখী ভাব নিয়ে খেলতে থাকা তাওহীদ অভিষেক ম্যাচের ন্যায় এই ম্যাচেও সফল। সেই ম্যাচে মাত্র ৮ রানের জন্য তিনি সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন। তার সেই আক্ষেপে আরেকটু যোগ হলো এই ম্যাচে। কারণ অর্ধশতক থেকে ১ রান দূরে থাকা অবস্থায় হৃদয়কে থামিয়ে দেন আইরিশ পেসার মার্ক অ্যাডায়ার। ফলে তরুণ এই ব্যাটার ৩৪ বলে ৪৯ রান করে মাঠ ছাড়েন। আর তাতেই ভেঙে যায় তাওহীদের সঙ্গে মুশফিকের ১২৮ রানের জুটি। এর আগে চলমান ইনিংসের বড় জুটি ছিল লিটন-শান্ত’র ১০১ রান।
তবে মুশফিকের ব্যাটের ধার তখনও কমেনি। সেঞ্চুরির তৃষ্ণা নিয়ে তিনি সঙ্গী বানান নতুন ব্যাটার ইয়াসির আলীকে। তবে রাব্বি তার যোগ্য সঙ্গ দিতে ব্যর্থ। ৭ বলে ৭ রান করে তিনি ফেরেন গ্রাহাম হিউমের বলে। এদিকে রাব্বি ফিরলেও মুশফিক তুলে নেন ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। ৬০ বলে ১০০ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
এর আগে সাকিব ছিলেন বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক, তবে সেই রেকর্ড আজ টপকে গেলেন মুশফিক। আইরিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট সংগ্রহ করেছেন গ্রাহাম হিউম। এছাড়া অ্যাডায়ার ও ক্যাম্পার একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
সিলেটেই আগামী ২৩ মার্চ হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।