বেহালাবাদক বন্ধুর মাধ্যমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করেছেন অভিযোগে যে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, সেই মামলায় চার ব্যাংক কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জুরিখের আদালত পুতিনের ঘনিষ্ঠ ওই বন্ধু ও চার ব্যাংকারের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেছে।
পুতিনের বন্ধুকে সাহায্য করার দায়ে ওই চার ব্যাংকারকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেছে জুরিখের আদালত।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সের্গেই রোলদুগিন ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে কয়েক মিলিয়ন ফ্রাঁ পাচার করেছিলেন। সের্গেইকে এই কাজে সহায়তা করেন চার ব্যাংকার। তাদের মধ্যে তিনজনই রুশ; যারা জুরিখে কাজ করেন এবং অন্যজন সুইস নাগরিক।
শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদালতের বিচারক ‘পুতিনের মানিব্যাগ’ হিসেবে পরিচিত বেহালাবাদক সের্গেই রোলদুগিনকে সহায়তা করায় ওই চার ব্যাংকারকে সাত মাসের স্থগিত সাজা দিয়েছেন। তারা রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ব্যাংকের জুরিখ শাখার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা।
২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে তিনি প্রায় ৩ কোটি মার্কিন ডলার লেনদেন করেছেন। তবে এই অর্থের উৎসের ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্য কোনও ব্যাখ্যা দেননি তিনি।
সুইজারল্যান্ডের আইন অনুযায়ী, কোনও অ্যাকাউন্টধারী বা তার অর্থের উৎস সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম রয়েছে। করে দিতে পারে ব্যাংক। হবে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের বড় মেয়ে মারিয়ার ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত বেহালাবাদক সের্গেই রোলদুগিন। রুশ প্রেসিডেন্ট তাকে ‘অর্ডার অব আলেকজান্ডার নেভস্কি’ সম্মাননাও দিয়েছেন।
দোষী সাব্যস্ত তিন ব্যাংকার রাশিয়ার নাগরিক এবং অন্যজন সুইস। তবে সুইজারল্যান্ডের আইনের কারণে সুইস ওই নাগরিকের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তবে এই চার অভিযুক্ত বলেছেন, তারা সুইস আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
জুরিখ আদালত চার ব্যাংকারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিরঙ্কুশভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। তবে বেহালাবাদক রোলদুগিনের সুইস ব্যাংকে লাখ লাখ ডলার লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে রোলদুগিনের আর্থিক সম্পর্কের বিষয়টি উন্মোচিত হয় ২০১৬ সালে। ওই বছর বিশ্বের রাঘব বোয়ালদের আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সের নথিতে তাদের নাম পাওয়া যায়। পানামা-ভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকা বিশ্বের লাখ লাখ গোপন আর্থিক লেনদেন ও অবৈধ অর্থপাচারের তথ্য ফাঁস করে সেই সময় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে।
২০১৪ সালে রোলদুগিন সুইজারল্যান্ডের গ্যাজপ্রম ব্যাংকে দুটি অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। এই দুই অ্যাকাউন্টের মালিক হিসাবে তার নাম দেওয়া হয়েছিল। সুইজারল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রুশ নাগরিকদের একজন রোলদুগিন। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও ব্যবসায়ী হিসাবে কোনও ধরনের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ ছিল না। তারপরও রোলদুগিন সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।
ওই সময় মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি ব্যবসায়ী নন। এমনকি তার মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারও নেই।’
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পুতিনের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, রোলদুগিন তাদের মধ্যেও আছেন। জুরিখের আদালতের বিচারক বলেছেন, রোলদুগিন যে অর্থ জমা করেছিলেন তার প্রকৃত মালিক তিনি ছিলেন না, এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।