বিচারবিভাগের সংস্কার করকেত নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনার জেরে ইসরায়েলে যে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তা মধ্যপ্রাচ্যের এই ভূখণ্ডকে বিশাল বিপদে ফেলবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত।
রোববার এক টুইটবার্তায় তিনি আরও বলেছেন, বর্তমানে ইসরায়েলে যে সংকট শুরু হয়েছে— তা গত ৫০ বছরের মধ্যে দেখা যায়নি।
১৯৭৩ সালে মিশর ও সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছিল ইসরায়েল। ইয়োম কিপ্পুর নামের সেই যুদ্ধের সময় ব্যাপক রাজনৈতিক সংকটে পড়েছিল ইহুদি ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এই ভূখণ্ডটি। টুইটবার্তায় সেই ইতিহাস টেনে বেনেত বলেন, ‘ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের পর এই প্রথম বিরাট বিপদে পড়তে যাচ্ছে ইসরায়েল।’
সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে মতান্তরের জেরে বরখাস্ত হওয়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তকে ফের তার পদে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বানও জানিয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসরায়েলের বিচারব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে পরিকল্পনা নেয় নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার। এ লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের কাজও শুরু করে ভূখণ্ডটির পার্লামেন্ট নেসেট।
প্রস্তাবিত নতুন আইনে দেশের আইনবিভাগ ও নির্বাহীবিভাগের তুলনায় বিচারবিভাগের ক্ষমতা সীমিত করতে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা গ্রহনের এক্তিয়ারও দেওয়া হয়েছে পার্লামেন্ট সদস্যদের।
এদিকে সরকার এই পরিকল্পনা নেওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ইসরায়েলে। সরকারের সমালোচকরা বলছেন, সরকারের এই পরিকল্পনা ইসরায়েলের বিচারিক স্বাধীনতার জন্য কেবল হুমকিই নয়, বরং এটি ভূখণ্ডের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ ইসরায়েলিদের টানা বিক্ষোভের মধ্যে গত শনিবার বিতর্কিত ওই সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে সরব হন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত। সেদিন টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে সরকারের এই সংস্কার পরিকল্পনাকে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ‘স্পষ্ট, তাৎক্ষণিক এবং বাস্তব বিপদ’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ভূখণ্ডের বর্তমান বিক্ষোভ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি আরও বলেন, এই সংকট সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হচ্ছে এবং একসময় ইসরায়েলের নিরাপত্তার ক্ষতি করতে পারে; কারণ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা এতে এতোটাই ক্ষুব্ধ ও হতাশ যা তিনি আগে কখনও দেখেননি।
এই ভাষণ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, রোববার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে গ্যালান্তকে অপসারণ করেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার অপসারণের পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে ইসরায়েলে।