১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতালাভের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কা তার বকেয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় চেয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে সোমবার এই আর্জি জানিয়েছেন।
সোমবার রাজধানী কলম্বোয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এক সভায় বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমরা চলতি বছর থেকেই বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা শুরু করছি। আশা করছি, আগামী ১০ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ ঋণ আমরা পরিশোধ করতে পারব।’
কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন— সে সম্পর্কিত কোনো পরিকল্পনা বা ঋণ পরিশোধের প্রক্রিা পুনর্গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি। প্রসঙ্গত, বর্তমানে শ্রীলঙ্কার বকেয়া বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে থাকা দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফের) কাছে জরুরিভিত্তিতে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। এই মুহূর্তে এ ঋণ শ্রীলঙ্কার জন্য কতটা প্রয়োজন, প্রেসিডেন্টের সোমবারের বক্তব্যে তার আভাসও পাওয়া গেছে।
‘আইএমএফের ঋণ পাওয়া গেলে আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচব। আমাদের আর কেউ দেউলিয়া বলতে পারব না।’
করোনা মহামারি এবং রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের আর্থিক অপব্যয় ও ত্রুটিপূর্ণ করনীতি গ্রহণের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের মজুত তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় গত বছরের শুরু থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে শ্রীলঙ্কায়। সংকট এমন গুরুতর জায়গায় পৌঁছেছিল যে, খাদ্য-জ্বালানি-ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্যও প্রয়োজনীয় ডলার ছিল না দেশটির সরকারের। ২০২২ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার সরকার নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে।
ওই সময় দেশটির অর্থমন্ত্রী ছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। পরে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হন, তবে এখনও অর্থমন্ত্রণালয় নিজের দায়িত্বেই রেখেছেন তিনি।
বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার ইতোমধ্যে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের পরিকল্পনা পুনর্গঠন করেছে। সেই পরিকল্পনা কী— তা এখনও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করেননি তিনি। তবে শ্রীলঙ্কার অন্যতম বৃহৎ পাওনাদার দেশ এই পরিকল্পনা সমর্থন করেছে বলে জানা গেছে। এমনকি বকেয়া পরিশোধের দায় থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২ বছর অব্যাহতি দেওয়া এবং দেশটিকে ঋণ প্রদানের জন্য আইএমএফকে সুপারিশও করেছে চীন।
এর আগে বিক্রমাসিংহে বলেছিলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় দেবে আইএমএফ।
এদিকে, আইএমএফের এক কর্মকর্তা এ ব্যাপারটি স্বীকার করে এএফপিকে জানিয়েছেন, চীন শ্রীলঙ্কার ঋণের কিস্তি পরিশোধের নতুন প্রস্তাব মেনে নিয়েছে বলেই ঋণের প্রথম কিস্তি পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাকি কিস্তিগুলো পেতে হলে অবশ্যই নতুন এই প্রস্তাবে পাওনাদার সব দেশের সম্মতি লাগবে।
‘শ্রীলঙ্কাকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে চীন। এ কারণে চীন শ্রীলঙ্কার পক্ষে থাকায় আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় দিতে যাচ্ছে; কিন্তু যদি বাকি কিস্তিগুলো পেতে হয়, সেক্ষেত্রে পাওনাদার সব দেশের সম্মতি আদায় করতে হবে শ্রীলৃ্কাকে,’ বলেন আইএমএফের ওই কর্মকর্তা।