ফ্রান্স সরকারের বিদেশি নাগরিকদের আশ্রয় প্রদান সম্পর্কিত দপ্তর (অফপ্রা) ২০২২ সালে দেশটিতে আশ্রয় চেয়ে আবেদনের তালিকা প্রকাশ করেছে। সে তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গত বছর ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়ে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে আফগানিস্তান থেকে, তার পরেই আছেন বাংলাদেশিরা।
অফপ্রার পরিসখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন ৮ হাজার ৬শ’র কিছু বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি।
এছাড়া, ৮ হাজার ৫০০ টি আবেদন নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে তুরস্ক। চতুর্থ অবস্থানে থাকা জর্জিয়া থেকে আবেদন করা হয়েছে ৮ হাজার ১০০টি৷
শীর্ষ আবেদনকারী দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র আফ্রিকান দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো৷ দেশটির নাগরিকেরা গত বছর ফ্রান্সে ৫৯০০টি প্রথম সুরক্ষা আবেদন করেছেন।
১৭ জানুয়ারি ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীনদের জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তর (অফপ্রা)। পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা গেছে, ২০২২ সালে মোট ১ লাখ ৩১ হাজার জন ফ্রান্সে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, যা আগের বছর ২০২১ সালের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।
তবে এর মধ্যে প্রথমবার আশ্রয় আবেদন করেছেন এক লাখ ১৪ হাজার ৭১০ জন। বাকিরা পুনঃআবেদন বা পুনরায় পূর্বের আবেদন সক্রিয় করেছেন৷
কোভিড ১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল। ২০২২ সালের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা করোনা মহামারির আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের পরিসংখ্যানের কাছাকাছি।
মোট ১৭ হাজার আফগান ২০২২ সালে ফ্রান্সে প্রথমবারের মতো সুরক্ষা চেয়েছেন। এই সংখ্যাটি আগের বছর ২০২১ সালের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে অফপ্রা। ২০২১ সালেও সর্বোচ্চসংখ্যক আশ্রয় আবেদনকারী ছিলেন আফগানরা।
আফগানিস্তানে তালেবান বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির নাগরিকদের দেশ ত্যাগের হার বেড়েছে৷
২০২১ সালের তালিকায় আফগানিস্তানের পর যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বাংলাদেশ ও আইভরি কোস্ট। ওই বছল ৬ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
২০২২ সালে অফপ্রা আগের বছরের আবেদনসহ মোট এক লাখ ৩৪ হাজার ৫০০টি আশ্রয় আবেদনের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। শতকরা হিসেবে আবদনের পক্ষে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের হার এক্ষেত্রে ২৯ শতাংশ।
প্যারিস অঞ্চলে অবস্থিত অফপ্রার স্থায়ী কার্যালয়, ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে ১৮টি বিশেষ কার্যক্রম, ফরাসি মূল ভূখন্ডের বাইরে অবস্থিত প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোতে ১১টি কার্যক্রমের মাধ্যমে এত বিপুল সংখ্যক আবেদনের সিদ্ধান্ত দিতে সক্ষম হয়েছে অফপ্রা।
এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চলমান অভিবাসী চাপের কারণে ইইউর সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে ১০টি আলাদা সফর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলিতে ২৬টি সফরও এত সিদ্ধান্ত দিতে ভূমিকা রেখেছে বলে অফপ্রার বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, একজন ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আওতায় শরণার্থী মর্যাদা কিংবা সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন পেতে সক্ষম হয়েছেন কীনা সেটি জানানো হয় অফপ্রার সিদ্ধান্তে।
ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেতে ব্যর্থ হওয়া আশ্রয়প্রার্থীরা চাইলে ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত সিএনডিএ তে আপিল আবেদন করতে পারেন।
বিপুল সংখ্যাক আশ্রয়প্রার্থী প্রথমবারের মতো অফপ্রায় সুরক্ষা আবেদন চাইলেও মোট সুরক্ষা আবেদন প্রদানের হার মাত্র ২৯ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় তিন শতাংশ বেশি।
ফ্রান্সের রাজনৈতিক আশ্রয়ের ইতিবাচক বা নেতিবচাক সিদ্ধান্ত পেতে এক সময় আশ্রয়প্রার্থীদের দীর্ঘ সময় ধরে অনিশ্চয়তায় কাটাতে হতো।
অফপ্রা জানিয়েছে, গত বছর পূর্বের আশ্রয় আবেদনগুলো প্রক্রিয়াকরণে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে৷।যার ফলে এক বছরের বেশি সময় ধরে মুলতুবি থাকা আবেদনের অনুপাত বছরের শেষে ৩.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ ও ২০২১ সালে কোভিড-১৯ জনিত স্বাস্থ্য সংকটের কারণে প্রতিটি আশ্রয় আবেদনের গড় প্রক্রিয়াকরণ সময় ৮.৫ মাস ছাড়িয়ে যায়।
২০২২ সালে এই সময়সীমা ৫.২ মাসে কমিয়ে আনা হয়েছে৷ এমনকি বছরের শেষে এটি চার মাসে নেমে এসেছিল।
ফ্রান্সের রাজনৈতিক আশ্রয় ও সুরক্ষা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের একটি বিকল্প জন্মসনদ বা প্রশাসনিক নথি সরবারহ করে অফপ্রা। যেটি পেতে একজন শরণার্থীকে আশ্রয় মর্যাদা পাওয়ার পর ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
এই প্রশাসনিক নথিটি শরণার্থীরা রেসিডেন্স কার্ড, পূর্ণাঙ্গ সিকিউরিটি সোশ্যাল সুবিধা ও জাতীয়তার আবেদনে ব্যবহৃত হয়।
২০২২ সালে অফপ্রা সর্বমোট ৪৩ হাজার ২০০টি বিকল্প জন্ম নিবন্ধন বা প্রশাসনিক পরিচয়পত্র সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছে।