কৃষ্ণসাগরে শস্যবাহী জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত চুক্তি (শস্যচুক্তি) থেকে রাশিয়ার সরে আসায় বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দামে উল্লম্ফণ ঘটবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আইএমএফের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ পিয়েরে অলিভিয়ের গৌরিনশাস বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, রাশিয়া যদি দ্রুত চুক্তিতে ফিরে না আসে— সেক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোতে বিশ্বজুড়ে গমের দাম ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
গৌরিনশাস বলেন, ‘গত বছরের অধিকাংশ সময় যে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ছিল, তার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ ছিল শস্যচুক্তি। এই চুক্তি যদি দীর্ঘদিন অকার্যকর থাকে, সেক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোতে সরবরাহজনিত ঘাটতির জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে যৌক্তিকভাবেই গমের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং দিনে দিনে এই ঊর্ধ্বগতি বাড়তেই থাকবে।’
‘এই চুক্তির বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। আমরা আশা করছি, রাশিয়া শিগগিরই শস্যচুক্তিতে ফিরে আসবে।’
২০২২ সালে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কৃষ্ণসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গম রপ্তানিকারী দেশ ইউক্রেনের শস্যগুদামগুলোতে আটকা পড়ে লাখ লাখ টন গম, ভুট্টা, ও সূর্যমুখীর বীজ।
এতে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারগুলোতে গম ও ভোজ্যতেলের যোগান সংকট শুরু হয়, ফলে বিশ্বজুড়ে হু হু করে বাড়তে থাকে খাদ্যশস্য আর ভোজ্যতেলের দাম। এই পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের আগস্টে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গত বছর আগস্টে চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে সেটির মেয়াদ। সর্বশেষ মেয়াদ বৃদ্ধির সময়সূচি অনুযায়ী, ১৭ জুলাই ছিল এই চুক্তির শেষ দিন।
চুক্তিতে ইউক্রেনের শর্ত ছিল— কৃষ্ণ সাগরের জাহাজ চলাচলের পথ থেকে সব মাইন অপসারণ করতে হবে এবং শস্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দিতে হবে।
অন্যদিকে রাশিয়ার শর্ত ছিল, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার শস্য ও কৃষিপণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোীয় মিত্ররা যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেসব তুলে নিতে হবে।
কিন্তু শর্ত অনুযায়ী রাশিয়া শস্যবাহী জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দিলেও রাশিয়ার শস্য ও কৃষিপণ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি পশ্চিমা বিশ্ব।
এই ব্যাপারটিতে যে রাশিয়া খুবই ক্ষুব্ধ— তা গত কয়েক মাস ধরেই জানান দিচ্ছিল মস্কো। গত ১৮ জুন রুশ দৈনিক ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেসকভ বলেছিলেন, ‘এই চুক্তির পেছনে আমাদের কিছু শর্ত ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য— সেসবের কোনোটিই মানা হয়নি। ভবিষ্যতে কী হবে— তা এখন বলা খুবই কঠিন; তবে আমরা বলতে পারি— মস্কো আর এই চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী নয়।’
অবশেষে গত ১৭ জুলাই শস্য চুক্তি থেকে চুড়ান্তভাবে সরে আসার ঘোষণা দেয় মস্কো।