দেশের মাত্র দুই হাজার বিচারক ৪০ লাখেরও অধিক মামলা নিষ্পত্তির কঠিন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। তবুও মামলাজট থেকে আমরা পরিত্রাণ পাচ্ছি না।
মঙ্গলবার (৭ মে) সুপ্রিমকোর্ট অডিটোরিয়ামে ‘প্রমাণিত:অপ্রমাণিত-আইনের সহজ পাঠ’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত আইনবিষয়ক উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান ‘প্রমাণিত:অপ্রমাণিত-আইনের সহজ পাঠ’ বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা হবে। এ অনুষ্ঠানে বিচারপ্রার্থী মানুষরা কেন বিচার পায় আর কেন পায় না তা দেখানো হবে। লিগ্যাল এইডের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন আপিল বিভাগ থেকে অবসর নেওয়া বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন সহজ একটি বিষয়, কোনো বিচারেই এমনটি দাবি করা যাবে না। এমনকি আমরা যারা আইন জগতের মানুষ, সারাজীবন আইনের বইপত্র-সাময়িকী কিংবা মামলার নথিতেই যাদের জীবন কেটে যাচ্ছে, তাদের কাছেও আইন প্রায়শই দুর্বোধ্য হয়ে ধরা দেয়। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনের বিভিন্ন দিক সহজবোধ্য করে তুলে ধরার কঠিন কাজটি যিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন, আজকের এ সৃষ্টিশীল কর্মের যিনি মূল রূপকার, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
তিনি আরও বলেন, আপাতদৃষ্টিতে প্রমাণিত:অপ্রমাণিত সাধারণ দুটি শব্দ মনে হলেও আইনের জগতে এ শব্দ দুটি নানা মাত্রায় আমাদের কাছে ধরা দেয়। আমাদের দেশে আদালতে কোনো কিছু প্রমাণ ও অপ্রমাণের যে যাত্রা তা অনেক ক্ষেত্রেই সুদীর্ঘ। এ যাত্রাপথে কত মানুষের দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার জড়িয়ে রয়েছে তা আমরা অনেকেই হয়ত হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারি না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের মাত্র দুই হাজার বিচারক ৪০ লাখেরও অধিক মামলা নিষ্পত্তির কঠিন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। তবুও মামলাজট থেকে আমরা পরিত্রাণ পাচ্ছি না। অনেক ক্ষেত্রেই একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে দশ-বারো বছর লেগে যায়। ইতোমধ্যে হয়ত বিচারপ্রার্থী লোকটি সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে মামলার খরচ চালাতে গিয়ে। এসবই আমাদের দেশের বাস্তবতা।
তিনি আরও বলেন, আবার এ কথাও সত্যি, আদালতে এমন অনেক বিষয় নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়, যা হয়ত মামলা পর্যন্ত গড়াতোই না, যদি সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের মধ্যে আইনি সচেতনতা থাকত।
সরকার বিগত এক দশকে বিচার কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকর করার মাধ্যমে এ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আইনের আশ্রয় লাভের সাংবিধানিক অধিকার আরও সহজতর হয়েছে।
উন্নত রাষ্ট্রে বিভিন্ন জনপ্রিয় লিগ্যাল টিভি শো উদাহরণ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, রিয়ালিটি শো রয়েছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন আইনগত সমস্যা বা বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আইনগত সচেতনতা তৈরি করা হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বর্তমান সরকার সব নাগরিকের আইনের সমান আশ্রয় ও ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিনা খরচে আইনি সেবা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিটিভিতে যে অনুষ্ঠানটি শুরু হতে যাচ্ছে- তার ফলে ভুক্তভোগী মানুষ আইনের প্রয়োগিক, মৌলিক চাহিদা জানার মাধ্যমে সঠিক সময়ে অপরাধের প্রতিকার চাইতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নাইমা হায়দার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।