গণঅবস্থান শেষে ফখরুল বলেন- আন্দোলনে জনগণ আরও জাগবে

গণঅবস্থান শেষে ফখরুল বলেন- আন্দোলনে জনগণ আরও জাগবে
গণঅবস্থান শেষে ফখরুল বলেন- আন্দোলনে জনগণ আরও জাগবে

ঢাকায় নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকার পতনের আন্দোলনে জনগণকে আরও ‘জেগে ওঠা’র ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাড়ে তিন ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি টেনে বিএনপি মহাসচিব এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘আপনারা জেগে উঠেছেন, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এখন আমাদেরকে আরও বেশি করে জেগে উঠতে হবে। আমরা আজকে সেই প্রস্তুতি নেই…আসুন আমরা জেগে উঠি।”

‘সত্যিকার অর্থে একটা কল্যাণমূলক বাংলাদেশ নির্মাণে’ নতুন প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যত ও তাদের স্বপ্ন দেখাতে তিনি সবাইকে জেগে ওঠার এ আহ্বান জানান।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচি করে বিএনপি। ঢাকা ছাড়াও অন্য বিভাগীয় নগরীসহ নয় জায়গায় একই সময়ে এই অবস্থান কর্মসূচি হয়।

জামিনে মুক্তি পাওয়ার দুই দিনের মাথায় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সেখানে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

আগামী ১৬ জানুয়ারি ১০ দফা দাবি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে সারাদেশে সমাবেশ ও মিছিল করার ঘোষণা দেন তিনি।

‘আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে’

আওয়ামী লীগ ‘রাজনৈতিক অস্তিত্ব’ হারিয়ে ফেলেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাকে এখন পুলিশের ওপর নির্ভর করে, আমলাদের ওপর নির্ভর করে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জোর করে দখল করে রাখতে হচ্ছে।”

<div class="paragraphs"><p>ঢাকায় নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা।</p></div>

ঢাকায় নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা।

 

এমন প্রেক্ষাপটে বাকি সব রাজনৈতিক দল বর্তমান সরকারকে সরিয়ে দিয়ে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে’ একমত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, “১০ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে তারা এ আন্দোলনকে সফল করবে।”

‘রাষ্ট্র সংস্কারে’ ২৭ দফা কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন করতে হবে।”

তার অভিযোগ, “আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধবংস করে দিয়েছে, তারা রাষ্ট্রকে ধবংস করে দিয়েছে। সেজন্য আমরা বলেছি, রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হবে।”

ওয়াসার এমডি তাকসিম আহমেদ খানের যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা দেখেছেন এই সরকারের একজন অত্যন্ত আশ্রিত, শোনা যায় তিনি না কি শীর্ষ নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ… ওয়াসার এমডি তাকসিম। তিনি আমেরিকাতে না কি ১৪টা বাড়ি কিনেছেন। একটা বাড়ি না কি ৫১৫ কোটি টাকা।

<div class="paragraphs"><p>ঢাকায় নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিতে নানান রঙের পোশাক পরে হাজির হয়েছিলেন নেতাকর্মীরা, তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড।</p></div>

ঢাকায় নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিতে নানান রঙের পোশাক পরে হাজির হয়েছিলেন নেতাকর্মীরা, তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড।

‘‘আপনারা ভাবুন যে, কোন দেশে আমরা বাস করছি। দেশের একজন সরকারি কর্মকর্তা, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সরকারের কাছ থেকে বেতন নেন, সে আজকে শত শত কোটি টাকা, হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে বাড়ি বানাচ্ছেন। আর আজকে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য ছোট-খাটো মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়ে এই দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ব্যাংকগুলোকে ধবংস করেছে। প্রত্যেকটি ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে তারা (ক্ষমতাসীনরা) বিদেশে পাচার করছে। সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে এখানে একটা লুটের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।”

রাজধানীতে সাড়ে তিন ঘণ্টার এ অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। ফকিরেরপুল বাজার থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে পলিথিন বিছিয়ে নেতাকর্মীরা বসে কর্মসূচি পালন করেন।

নেতাকর্মীদের মাথায় ছিল লাল-সবুজ-হলুদ-নীল টুপি, যা এ গণঅবস্থান কর্মসূচিকে ভিন্ন রূপ দেয়। তারা মাঝে মাঝেই শ্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা সরব করে রাখে।

কর্মসূচির ফাঁকে ফাঁকে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা দলীয় এবং দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

ঢাকার গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে এটি তার দ্বিতীয় কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।

বুধবার নয়া পল্টনে বিএনপির এ কর্মসূচির একই সময়ে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য প্রেস ক্লাবের পূর্ব প্রান্তে, গণফোরাম আরামবাগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয় নগরে পানির ট্যাংকের কাছে, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট পুরানা পল্টনে এবং এলডিপি কাওরান বাজারে এফডিসির কাছে নিজেদের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করে।

নয়া পল্টনের কর্মসূচিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় ফরিদপুর ও ময়মনসিংহের গণঅবস্থানের কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার বিএনপির বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।

তিনি ‘অন্যায়ের’ বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়ায় ৬০ বিশিষ্টজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি আন্দোলনের খবর প্রচার করায় ‘মিডিয়া-গণমাধ্যমের’ কর্মীদেরও ধন্যবাদ দেন।

কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে কারামুক্ত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আমরা টোকা দিয়ে নয়, ধাক্কা দিয়ে নয়, একটা সঠিক সাচ্চা ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই।”

সভাপতির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনও ১০ দফা বাস্তবায়নে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের আমিনুল হকের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, মজিবুর রহমান, নিপুণ রায় চৌধুরী বক্তব্য দেন।

অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস ও হেলেন জেরিন খান, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, যুব দলের মামুন হাসান ও মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী ও রাজিব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন ও শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতী দলের কাজী মুনীরুজ্জামান মুনীর, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, উলামা দলের মাওলানা আবুল হোসেন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী, জিয়া পরিষদের আব্দুল কুদ্দুস, ড্যাবের আবদুস সালাম, এবের রিয়াজুল ইসলাম রিজু বক্তব্য রাখেন।

কর্মসূচিতে বিএনপির মনিরুল হক চৌধুরী, আসাদুজ্জামান রিপন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুম আহমেদ তালুকদার, আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল, ডা. রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, রেহানা আক্তার রানু, শাম্মী আখতার, কাজী আবুল বাশার, মোরতাজুল করীম বাদরু, আকরামুল হাসান মিন্টু অংশ নেন।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *