চাকরির প্রলোভনে তরুনীদের ফাঁসাতেন প্রকৌশলী জামানুর, আছে অসংখ্য দূর্নীতির অভিযোগ

নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটাতে চাকরির প্রলোভনে তরুণীদের নিজের জালে ফাঁসাতেন প্রকৌশলী জামানুর। কেউ রাজি না হলে দিতেন নানা অপবাদ। সম্প্রতি এক তরুণীকে পাগল অপবাদে ভর্তি করিয়েছেন মানসিক হাসপাতালে। এমন অভিযোগ উঠেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্তি মিললেও ওই তরুণীর দিন কাটছে অজানা আতঙ্কে।

তরুণী সেতুর জীবন সংগ্রামের গল্পটা শুনে মনে হবে এ যেন এক সিনেমার গল্প। প্রকৌশলী জামানুরের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় শিকার হয়েছেন নির্যাতনের, দীর্ঘ সময় থাকতে হয়েছে মানষিক হাসপাতালে। অজ্ঞাত ফোন কল পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন স্বামী। এরপর পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্তি মেলে তরুণীর।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে গত ৮ সেপ্টেম্বর দাখিলকৃত এক অভিযোগে দেখা যায়, তিন পৃষ্ঠার ওই অভিযোগের ২০ নম্বর দফায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের নারীলিপ্সুতা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, সংস্থার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানকে চাকরিতে নিয়োগের প্রার্থী জোগান দিতেন প্রকৌশলী জামানুর রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় এক তরুণীকে চাকরি দেয়ার কথা বলে দীর্ঘদিন সম্মানহানির পর তাকে চাকরি দিতে না পারায় ভুক্তভোগী তরুণী মুখ খুলতে পারে— এমন ভয় থেকে তরুণীকে প্রথমে শিকল বন্দি করে আটকে রাখে এবং পরে পাগল অপবাদে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন প্রকৌশলী জামানুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে, খুলনা সার্কেলের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান চাকরির প্রলোভনে নিজের জালে ফাঁসাতেন বিভিন্ন তরুণীকে। ফাঁদে পা দিয়ে আবার কেউ রাজি না হলে তাকে দেয়া হয় নানা অপবাদ। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তরুণীকে পাগল অপবাদে ভর্তি করিয়েছেন পাবনা মানসিক হাসপাতালে। পরে মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্তি মিললেও ওই তরুণীর দিন কাটছে অজানা আতঙ্কে আর রয়েছেন আত্মগোপনে।
ভুক্তভোগী ওই তরুণীর স্বামী জানান, ফেনী থেকে একটা ফোন কল আসে এবং অপর প্রান্ত থেকে আমার স্ত্রীর নাম করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি বলে তিনি পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এরপরই আমি বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হই এবং আদালতের নির্দেশে আমার স্ত্রীকে মানসিক হাসপাতাল থেকে মুক্ত করি।
তিনি বলেন, তাদের অনেক টাকা এবং লোকজন আছে। তাই আমরা জীবন ও সম্মান রক্ষার্থে আত্মগোপনে আছি। ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েছে, এখন বেঁচে থাকতে চাই।
আদালতে তরুণী দেয়া জবানবন্দিতে দেখা যায়, দীর্ঘদিন কীভাবে জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রকৌশলী জামানুর রহমান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাকরি বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। পাশাপাশি চাকরি দেয়ার নামে কীভাবে তরুণীদের ফাঁসাতেন নিজের জালে।

ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, জামানুর রহমানের কাছে চাকরির জন্য গেলে তিনি বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন দেখান। এমনকি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীও তার খুবই ঘনিষ্ঠ বলে জানান তিনি। তাকে যা বলবে তাই সাবেক প্রধান প্রকৌশলী করবেন বলে জানান জামানুর রহমান। তার কাছে একটা চাকরি দেয়া তো মামুলি ব্যাপার। যেন আমার চাকরি হয়েই গেছে। এরপর এক পর্যায়ে প্রকৌশলী জামানুর আমাকে বলেন, এমনি এমনি এ জগতে কেউ কাউকে কিছুই দেয় না— চাকরি তো দূরের কথা। কিছু পাইতে হলে কিছু দিতে হয়।

জামানুর রহমানের এমন মন্তব্যের পর সেতু প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পেরে পিছু হটতে শুরু করলেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বানানো হয় পাগল। ভর্তি করানো হয় মানসিক হাসপাতালে।
চাকরির প্রলোভনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের তরুণীদের নিজের জালে ফাঁসানোর ঘটনাটি শিহরিত হয়ে ওঠার মতো। এমনকি প্রকৌশলী জামানুর রহমান তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ নষ্ট করতে ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে কীভাবে তাকে মানসিক রোগী সাজিয়েছেন তা পিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী মোছাঃ সেতু খাতুন গতকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন ১১দপ্তরে বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।

খবর নিয়ে জানাযায়, ১৯৭১ সালে জামানুর রহমানের বাবা পিচ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, বিএনপি ও জামাতের একাধিক মিটিংয়ে তাকে দেখা গেছে তার বাবার নামে একটি সড়ক এখন বলবত রয়েছে কুষ্টিয়ায়। অভিযোগ রয়েছে সরকারি চাকরিও তিনি নিয়েছেন ভূয়া তথ্য দিয়ে।

নারী লোভী এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলা দায়ের হলে মন্ত্রনালয় থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলে চাকুরি ফিরে পাবার আসায় রাজনৈতিক নেতাদের অনেক টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন।

প্রকৌশলী জামানুর রহমানের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি বলেন, ‘জরুরি মিটিংয়ে আছি—পরে কথা হবে।’ যদিও তিনি আর ফোন করেননি বা ফোন ধরেননি। মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *