বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় পরোক্ষভাবে প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর

বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় পরোক্ষভাবে প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর
বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় পরোক্ষভাবে প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর

সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের পর এবার বাড়ানো হলো শিল্প কারখানায় ও বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দাম বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন মূল্য কার্যকর হবে। তবে আবাসিক, সিএনজি ও চা শিল্পের গ্যাসের দাম বাড়েনি, এসব খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম আগের মতোই রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় জনজীবনে সরাসরি প্রভাব না পড়লেও পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে। এদিকে সরকার বলছে, এই দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের ভর্তুকি কমবে।

সরকারের ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মাসেই খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি দেখিয়ে গত বছর আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করে সরকার।  ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা বাড়িয়ে ১১৪, পেট্রোল ৮৬ থেকে ১৩০ এবং অকটেনের দাম ৮৯ থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।   কয়েক দিনের মাথায় লিটারপ্রতি দাম ৫ টাকা কমিয়ে যথাক্রমে ১০৯, ১২৫ ও ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। পরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম  কমলেও দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেনি।

তেলের মূল্যবৃদ্ধির গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে চলতি জানুয়ারি মাস থেকেই কার্যকর হয়। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কয়েকদিনের মাথায় ১৮ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম খাত ভেদে ১৪ থেকে ১৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ  বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির গ্যাসের দাম বাড়ানোর  কোনো যৌক্তিকতা নেই। অনেক বিকল্প পথ থাকলেও সরকার সেদিকে যায়নি। সরকার বলছেন বিপুল পরিমাণ আর্থিক ঘাটতি মেটাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। অথচ জ্বালানি সেক্টরের দূরবস্থার জন্য সরকার নিজেই দায়ী।

তিনি বলেন, সরকারের একাধিক মন্ত্রী অনেক দিন ধরে বলছেন বিদেশ থেকে চড়া দামে এলএনজি আমদানির করছেন। সরকার দেশের গ্যাস উত্তোলন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারতো। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে কিছু প্রতিষ্ঠানকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছে  তা পদ্মা সেতুর ব্যয়ের দ্বিগুণ। গ্যাসের অনুসন্ধান না করে বেশি দামে এলএনজি আমদানিতে করছে। কিন্তু এলএনজির দাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না থামলে বাড়তে থাকবে। গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ানো  হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর (২০২২ সালে)  প্রতিদিন ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির কথা জানিয় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা। বিইআরসি গত জুনে ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে গ্যাসের দাম প্রায় ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। তখন প্রতিদিনের জন্য আমদানি ধরা হয়েছিল দিনে ৬৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন দিনে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি খাতে দুর্নীতি কমানো যায় তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে না৷ সরকার  গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এজন্য বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা দরকার। এ অবস্থায় চড়া দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব।

তিনি বলেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো এখন মুনাফায় রয়েছে। এখন দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই। করোনায় এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। তারা এ মূল্যবৃদ্ধির চাপ নেওয়ার অবস্থায় নেই।

বের হওয়ার উপায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিকীকরণ মুক্ত করতে হবে।  নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন অব্যাহত রাখাসহ সাশ্রয়ী হতে হবে। লুন্ঠন জাতীয় সব ব্যয় বন্ধ করতে পারলে সংকট কমবে। নাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।’

এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি৷ এখন দেশের অর্থনীতির যা অবস্থা তাতে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে৷ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে সব ধরনের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে৷ ফলে পণ্যের দাম বাড়বে৷ যা বহন করতে হবে ভোক্তাদের৷ 

গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর ১৮ জানুয়ারি রাতে  জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো  সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভর্তুকি সমন্বয় ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *