গণপূর্তের আন্তরিকতায় আধুনিক রাজস্ব ভবনে এনবিআর

‘৩০ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে’ কবিতার এমন যতনার মতই ৩০ টি বছর রাজস্ব কর্মকর্তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে নিজস্ব ভবন পেতে। চোখের পানির কথা দিয়ে শুরু করলেও সুখবর হচ্ছে দীর্ঘ ৩০ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। রাষ্ট্রের যে সংস্থা জাতীয় বাজেটের ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থের যোগান দেয়। এবং দেশের চাকা সচ্ছল রাখতে চালিকা শক্তি হিসাবে অর্থনৈতিতে ভূমিকা রাখেন।তাদের ও ছিলো না নিজস্ব ভবন।গণপূর্তের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৯৯২ সালে তাদের নিজস্ব ভবনের অবকাঠামো যাত্রা শুরু হয়।

সেই বছরই সর্বপ্রথম রাজস্ব ভবন নির্মাণে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে নাটকীয়ভাবে শুরু হয় জমি সংক্রান্ত মামলার জটিলতা। এই জমিতে ভবন হবে কী না তা নিয়ে একসময় তৈরি হয় সংশয়। এর মধ্যে পার হয়ে যায় ১০ বছর।শুরু হয় নতুন জটিলতা তা কাটিয়ে উঠে ২০০২ সালে জমি বরাদ্দ পেলেও বুঝে পেতে বিলম্ব হয় ছয় বছর।

২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয় একনেকে। জমি নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হলে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর।জমি হাতে পেতে না পেতেই প্রথম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

তখনই কাজ করার সুযোগ পায় গণপূর্ত অধিদফতর।প্রথম প্রকল্প ভবনের নকশা পরিবর্তন করে পরিসর বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়।

এর মাঝেও আসে নতুন জটিলতা, ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১২ তলা ভবন নির্মাণের কথা ছিল প্রথম প্রকল্পে। কিন্তু সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন ছাড়াই ৩০ তলা ভিত্তির ওপর ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

এর মধ্যে আবার বিপত্তি বাধে সরকারি দুই দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু তা নেয়নি এনবিআর। এ নিয়ে সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি গড়ায় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০ তলা না করে ১২ তলা ভবন করতে হবে। কেননা বিমানবন্দর কাছাকাছি রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১২ তলার ভৌত অবকাঠমোর কাজ সম্পন্ন করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। মোহাম্মদ শামীম আখতার গণপূর্তের শীর্ষ পদে যোগ দেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। ধীরগতিতে চলতে থাকা ভৌত অবকাঠামোর কাজ দ্রুত শেষ করার কর্ম পরিকল্পনা করেন, জানালেন তিনি।

নিজের অফিসে আলাপ কালে শামীম আখতার যুগান্তরকে বলেন, রাজস্ব ভবন আমি এসে যেভাবে পেলাম, প্লান করলাম বার বার স্থবিরতা থেকে বের হতে হবে, অন্তত ভৌত অবকাঠামোগত জায়গায় দীর্ঘ না হয় আর মনে মনে ভাবছিলাম কাজটা শেষ করে ফেলতে পারলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তরের সুযোগটাও আসবে। আমি সৌভাগ্যবান এবং সাথে সাথে গণপূর্ত অধিদপ্তরও, আধুনিক বাংলাদেশের আগামীর রূপরেখায় কিছুটা কাজ আমিও করতে পেরেছি।তবে আমরা পেছনের মানুষ সামনে থেকে নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী।

২০২০ থেকে ২০২২ এ শেষ হয় সকল কাজ। বাংলাদেশের আধুনিক রাজস্ব ভবনের নির্মান শেষে ২৯ জানুয়ারি এনবিআরের নবনির্মিত রাজস্ব ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর।

ভবনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক সুবিধাসংবলিত। ভবনের মোট আয়তন ৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্লোরের উচ্চতা ১৩ ফুট। বেজমেন্টের আয়তন ৬৬ হাজার বর্গফুট। নিচতলা থেকে চতুর্থতলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৪৪ হাজার বর্গফুট করে। পঞ্চম থেকে বাকি সব তলার আয়তন ৪৬ হাজার বর্গফুট। তবে এবার নিজস্ব ভবনে দাপ্তরিক সব কার্যক্রম পরিচালনা করবে সরকারের রাজস্ব কর্মকর্তা। এতে কাজে পুরো দামে গতিশীলতা আসবে।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *