অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় দেওয়া ঋণ ফেরত আসছে না, খেলাপি ঋণ বাড়ল ১৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা

প্রভাবশালীদের চাপ ও নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় দেওয়া ঋণ ফেরত আসছে না। ফলে দিনকে দিন বাড়ছে মন্দ ঋণের বোঝা। বিপাকে পড়ছে ব্যাংকগুলো। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় বা বিশেষ সুযোগ আরও বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সবশেষ সুবিধার মধ্যে ছিল ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা জমা দিলেই খেলাপি হবে না। এতে শেষ প্রান্তিকে কিছুটা মন্দ ঋণ কমলেও বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত ডিসেম্বর-২০২২ প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারির সময় ব্যাংকঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ছাড় ও নানা সুবিধা। বছরের শুরুতে তা তুলে নেওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। গেল বছর খেলাপি কিস্তির ৭৫ শতাংশ অর্থ জমা দিলে খেলাপি মুক্তির সুযোগ ছিল। কিন্তু তাতেও খেলাপি ঋণ না কমায় পরে তাদের সুবিধা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সুবিধার ফলে ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে যারা ঋণের কিস্তির ৫০ শতাংশ অর্থ জমা দিয়েছে তারা কেউ খেলাপি হননি। তারপরও বছরের ব্যবধানে বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। কারণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়।  

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয় এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

একই বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

২০২১ সালের ডিসেম্বর খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ হিসাবে গেল বছর (২০২২ সাল) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা।

তবে ত্রৈমাসিকের তুলনা করলে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ১৩ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ২০ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণ কমাতে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। এসব নীতি সহায়তার কারণেই খেলাপি ঋণ শেষ প্রান্তিকে কিছুটা কমেছে।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *