দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পদোন্নতিবঞ্চিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ১৭৩ চিকিৎসকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ বিভাগ ও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের এসব চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
গত ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজস্ট্রার অধ্যাপক এবিএম আব্দুল হান্নান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ২০০৩-২০০৬ সাল পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া যে সকল মেডিকেল অফিসার বা গবেষণা সহকারীরা উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে উল্লেখিত চিকিৎসকদের তাঁদের নামের পার্শ্বে বর্ণিত পদ ও বিভাগে লিখিত শর্তে সহকারী অধ্যাপক (স্ববেতনে), কনসালটেন্ট পদের নিয়োগ বা পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
শর্তগুলো হলো:
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত মূল বেতন এবং অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে।
২. এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন (১৯৯৮ সনের ১নং আইন), বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত ও প্রণীতব্য সংশ্লিষ্ট সকল সংবিধি, অধ্যাদেশ, প্রবিধান ও নিয়ম অনুযায়ী চাকরি নিয়ন্ত্রিত হবে।
৩. সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকবৃন্দকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নন-প্র্যাকটিসিং কার্যক্রম চালু হলে সেখানে যোগদান করতে হবে। শর্তসমূহের ব্যত্যয় হলে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৪. সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদন স্বাপেক্ষে এই নিয়োগ ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর বলে গণ্য হবে এবং যার যার প্রাপ্যতা অনুযায়ী বেতন স্কেল ও গ্রেড নির্ধারণ করা হবে।
৫. গত ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৩৩তম সভার সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তীতে সিন্ডিকেটে সংশোধন করা স্বাপেক্ষে ২০০৮ সালের ২৬ জুনে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৮তম সভার সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বহাল করা হবে।
এসব শর্ত পদোন্নতি প্রাপ্তদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এই নিয়োগপত্র পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে প্রত্যেককে নিয়োগ গ্রহণের সম্মতিপত্র রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও এই আদেশটি যারা জানুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন কেবলমাত্র সেসব বঞ্চিত প্রার্থীদের জন্য বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে পদোন্নতির তালিকার সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের একটা অংশ বলছেন, পদোন্নতি পাওয়া চিকিৎসকরা সবাই বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর সদস্য ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত চিকিৎসক। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের তালিকায় ড্যাব বিএসএমএমইউ শাখার সভাপতি ও মহাসচিবের নামও রয়েছে।
তারা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না। বর্তমান প্রশাসনের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসক। এমনকি আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চিকিৎসকরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না। এমন অবস্থায় নিজ বাসভবনে বসেই রেজিস্ট্রার এই অফিস আদেশ জারি করেছেন।