চলতি বছরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ অনুযায়ী প্রণীত ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ (পরীক্ষামূলক সংস্করণ) বইয়ের একটি প্রবন্ধের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ উঠেছে।
বইটি রচনা করেছেন তানজিল ফাতেমা, ড. মো. কামালউদ্দিন খান, শেখ নিশাত নাজমী, কামরুল হাসান ফেরদৌস, মো. রেজওয়ানুল হক, মুহাম্মদ রাশীদুল হাসান শরীফ, তানজিনা খানম ও সুলতানা সাদেক। সম্পাদনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ও মঞ্জুর আহমদ।
গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ষষ্ঠ শ্রেণির ওই বইয়ের প্রবন্ধ নিয়ে এমন অভিযোগ এনে নিজের লেখক স্বত্ব দাবি করেছেন নাসরুল্লাহ শাকুরি নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী।
তার দাবি, তিনি জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘টুঙ্গিপাড়ার সেই ছেলেটি’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন। তা ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট অনলাইন গণমাধ্যম পূর্বপশ্চিমে প্রকাশিত হয়। সে লেখার কিছু অংশ বাদ দিয়ে একই শিরোনামে ষষ্ঠ শ্রেণির ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু, এতে লেখকের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
নাসরুল্লাহ শাকুরি রাইজিংবিডিকে বলেছেন, একজন লেখকের একটি লেখা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া তার জন্যে সম্মানের, অত্যন্ত গৌরবের। কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখানে লেখকের নাম উল্লেখ না করে লেখায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে লেখাটি পাঠ্যবইয়ে ছাপানো হয়েছে। এজন্য অনুমতিও নেওয়া হয়নি, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
এ বিষয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো ফরহাদুল ইসলাম বলেছেন, জাতীয় পর্যায়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে তারা যে রিপোর্ট দেবে, সে রিপোর্টের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে গঠিত জাতীয় তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম। তিনি বলেছেন, এমন ঘটনা কাম্য নয়। বিষয়টি দুঃখজনক। যদি প্রয়োজনীয় লেখা কপি-পেস্ট করতে হয়, তবে সেখানে উল্লেখ করতে হবে যে, আমি ওমুক লেখকের লেখাটি এখানে উল্লেখ করেছি। অথবা লেখাটি যদি হুবহু নেওয়া হয়ে থাকে, তবে মূল লেখকের নামেই সেটি প্রকাশিত হবে। এ বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।
উল্লেখ্য, এবার শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীরা দুই ধরনের বই হাতে পেয়েছে। এর মধ্যে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত বই হাতে পেয়েছে। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পুরনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত বই পেয়েছে।
নতুন পাঠ্যপুস্তকগুলোর মধ্যে প্রথম আলোচনায় আসে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বই। বইটির প্রথম অধ্যায় ‘জীববৈচিত্র্য পাঠে’ দেখা গেছে, এর বেশকিছু অংশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুবাদ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে যখন ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়, তখন এর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেন বইটি সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান।