
মনোয়ন বাণিজ্যের কারনে জেলা পরিষদ নির্বাচনে লজ্জা জনক হার।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শেরপুর আওয়ামীলীগের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে চন্দন কুমার পাল বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্থানীয় সরকার ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছ থেকে তিন দফায় মনোনয়ন বানিজ্যের কারনে জেলা পরিষদ নির্বাচনে টানা দুইবার লজ্জাজনকভাবে হেরেছেন শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল। এ ছাড়াও রাজাকার বিএনপি-জামায়াত- নেতাদের টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ পদবী দেয়ার পাশাপাশি দখলবাজি, টেন্ডার বাজি, সরকারী গুদামে বিভিন্ন রকম ব্যবসা, সাব-রেজিষ্টার অফিসে চাঁদাবাজিসহ নানা দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে চন্দন কুমারের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযোগ হচ্ছে, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের যৌন হয়রানি ও কু-প্রস্তাবে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন চন্দন কুমার পাল।
এসব বিষয়ে গত ১২ নভেম্বর দলীয় সভাপতি নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ- সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল খালেক।
অভিযোগে দাবি করা হয় শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল জেলার ৫২ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি, জামাত নেতাসহ বিতর্কিতদের মনোয়ন পাইয়ে দেওয়ার বিনিময় জন প্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই নৌকার মনোয়ন পেয়েছে। আবার যারা পাননি তাদের টাকাও ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও রাজাকার বিএনপি-জামায়াত নেতাদের টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ পদবীতে রাখা দলবাজি, টেন্ডার বাজি, সরকারী গুদামে বিভিন্ন রকম ব্যবসা, সাব-রেজিষ্টার অফিসে চাঁদাবাজি সহ নানা দুর্নীতির সাথে জড়িত চন্দন কুমার পাল। এমন কি কখনো উপজেলায় দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণও করেন না তিনি। এতে করে ক্ষমতায় থেকেও দলের ইমেজ সংকটে ফেলে দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় আওয়ামীলীগে নেতাদের অভিযোগ শেরপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল।এমন কোন কাজ নেই যা তিনি করেন না। এবং তার সাথে বিএনপি জামায়াতের নিয়মিত যোগযোগ রয়েছে। গত নির্বাচনে দুইজন বিএনপির পদ-পদবী ধারী নেতাকে নৌকার টিকেট দিয়েছেন টাকার বিনিময়ে। অন্যদিকে ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতাদের দল থেকে বিতাড়িত করেছেন। এক কথায় চন্দন কুমার একাই শেরপুর আওয়ামীলীগের রাজনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছেন বলে বলে দাবি আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের। চন্দন কুমারের নানা অনিয়মের কারণে বর্তমানে আওয়ামী লীগ শেরপুরে ইমেজ সংকটে রয়েছে। এনিয়ে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে ভাঙন ও সৃষ্টি হলে তার ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে পারছেন না।
নলকোড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কুমার পাল পদে বসে থেকে শেরপুর আওয়ামীলীগের কুমার ভেঙে দিয়েছেন। গত নিবার্চনে তিনি আওয়ামীলীগ নেতাদের বাদ দিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের বিএনপি নেতা ওবাইদুল ধানশাইল ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌফিকুর রহমান এনামুলকে নৌকার প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করিয়েছেন। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পরও তাদেরকে আর বাদ দেওয়া হয়নি। অথচ তাদেরকে চিনেন না এবং তারা কখনে দলীয় প্রোগ্রামে অংশ নেননি বলে ডিও দিয়েছেন শেরপুর ৩ আসনের সাংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার একে এম ফজলুল হক।কিন্তু এতে কোন কাজ হয়নি।এরা বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী নয়।তবে নৌকার প্রতীক ও মুজিব কোট পড়ে আওয়ামীলীগ সাজলে ও হ্নদয়ে বুকে ধারন করেন জিয়াউর রহমানের আদর্শ।

শেরপুর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শামসুন নাহার বলেন,চন্দন কুমার সাহবের জন্য নারীদের রাজনীতি করা দায় হয়ে উঠেছে। তিনি সন্ধ্যা হলে মদ খেয়ে পড়ে থাকেন, যুব মহিলা লীগ ও আওয়ামীলীগের নারী নেত্রীদের সব সময় কু-প্রস্তাব দেন, যৌন হয়রানি ও অশালীন ভাষায় কথা বার্তা বলেন। এবং তার ডাকে সাড়া না দিলে পদচ্যুত করেন। সম্প্রতি যুব মহিলা লীগের একজন শীর্ষ নেত্রীকে তার ডাকে সাড়া না দেওয়া পদচ্যুত করা হয়। তিনি আরও বলেন, আমি তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেছি, আন্দোলন ও করেছি তারপরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন শুধু ভরসা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
শামসুন নাহার দাবি করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে মনোয়ন বানিজ্যের কারনে সদ্য শেষ হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং এর আগে নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েও জামানত হারিয়েছেন। চন্দন কুমার পাল চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি নানা ধরনের অপকর্ম জড়িত উল্লেখ করে তার হাতে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন যুব মহিলা আওয়ামীলীগের এই সভাপতি।
আওয়ামীলীগ নেতাদের দাবি, কমিশন ও চাঁদা না পেলে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজেও বাধা প্রদান করেন চন্দন কুমার পাল।
চলতি বছরের শুরুতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছ থেকে পুরাতন লোহার ব্যবহার অযোগ্য ভাঙাচোরা মালামাল টেন্ডারের মাধ্যমে নিলামে নিয়েছেন কুষ্টিয়ার টিপু নামে এক ব্যবসায়ী।এ পুরাতন মাল নিতে চাঁদা দাবী করেন চন্দন কুমার পাল।পরে চাঁদা না দেওয়ার কারনে তিনমাস এসব পূরাতন মালামাল আটকে রাখেন তিনি।পরে মোটা অংকের টাকা এবং একজন সাবেক মন্ত্রীর ফোন পেয়ে মালামাল গুলো ছেড়ে দেন চন্দন কুমার পাল। এ বিষয়টি নিয়ে তুমুল বির্তক আলোচনা ও সমালোচনা জন্ম দেয় শেরপুরে।এতে করে দলের পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।এখন তিনি আবারও সভাপতি বা সম্পাদক হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
সাধারণ নেতাকর্মীদের অভিযোগ শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করতে চন্দন কুমার পাল একজনই যথেষ্ট।তাকে টাকা দিলে বিএনপি -জামাত তথা রাজাকার যেই হউক দলীয় পদ পদবী অনায়াসে পাওয়া যায়।তার কাছে রাজনৈতিক আদর্শের কোন মূল্য নেই। অভিযোগ আছে মোটা অংকের বিনিময় চন্দন কুমার শেরপুর আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটিতে নকলা চন্দ্রকোনা জামায়াতের আমির আবু খলিফার ছেলে মনিরুল ইসলাম নাহিদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক পদে বসানো হয়েছে মোঃ মামুনুর নামে একজন রাজাকার পূত্রকে।
শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগর সহ- সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল খালেক প্রতিবেদককে বলেন, চন্দন কুমার সাহেব টানা ২০ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকার সুবিধা নিয়ে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্থানীয় সরকার ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছ থেকে তিন দফায় মনোনয়ন বানিজ্যে করেছেন।এ কারনে জেলা পরিষদ নির্বাচনে টানা দুইবার লজ্জাজনকভাবে হেরেছেন। শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল। গত জেলা। পরিষদ নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে দলীয় ও বিএনপি জামাত পন্থি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে মনোনয়ন বানিজ্য করে হাতিয়ে নেন বিপুল পরিমাণ টাকা। এ ছাড়াও বিএনপি জামায়াতের নেতা ও অযোগ্যদের টাকার বিনিময় দলে টেনে শেরপুর আওয়ামীলীগের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছেন চন্দন কুমার পাল।
জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল প্রতিবেদক কে বলেন, যেসব অভিযোগ আমার বিররুদ্ধে আনা হয়েছে তা কিছু দুষ্ট লোকের পরিকল্পিত অপবাদ। তারা আগামী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমার পিছু লেগেছে। তা ছাড়া আমি ৩০ বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগী, আমি কোন নারীদের যৌন হয়রানি করিনি বা কু-প্রস্তাবও দেইনি।আমি মদও পান করি না।
তিনি আরও বলেন, মনোনয়ন বানিজ্য কথাটি ঠিক নয়।কারন ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সম্পাদকের সাক্ষরের ভিক্তিতে মনোনয়নের জন্য কেন্দ্র পাঠানো হয়।আমি জেলা পরিষদ নির্বাচনে কালো টাকার কাছে হেরেছি। বিএনপি-জামায়াতের নেতা কর্মীদের টাকার বিনিময় আওয়ামীলীগে স্থান দেওয়ার অভিযোগও সত্য নয়।