পেনশনর টাকায় ইলেকশন ফান্ড গঠন করতে হবে এত দীনতায় পড়েনি আওয়ামী লীগ: প্রধানমন্ত্রী

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড গঠন করতে হবে আওয়ামী লীগ এত দীনতায় পড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হলো নিজের খেয়ে নৌকা… সাধারণ মানুষ নিজের খেয়ে নৌকায় ভোট দেয়, এটাই হলো বাস্তবতা।

সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সম্পর্কে অবহিত করতে আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পায় কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী বা সাধারণ মানুষ পেনশন পায় না। তাদের কথা চিন্তা করেই এটা করা হয়েছে। পেনশন স্কিমে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই স্কিমে এখন যে টাকা রাখবে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট বয়সসীমার পর সে টাকা পাবেন। অথবা মাঝখানে কেউ তুলে নিতে চাইলে সেটাও নিতে পারবে। এটা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলার সুযোগ নেই। যারা এখন নেতিবাচক কথা বলছে তারা এক সময় এই পেনশন স্কিমে আসবে, এটা বলে রাখলাম।

জনগণকে আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টাকা অন্য কোথাও নেওয়ার সুযোগ নেই। নয়-ছয় করা যাবে না।

নেতিবাচক প্রচারণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশ তো ছয় ঋতুর দেশ। সবাই সবকিছু সহজে ভুলে যায়। পেনশন স্কিমটি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, এখন সেটি বাস্তবায়ন করছি। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমুখী কাজ। এটা নিয়েও সমালোচনা, নেতিবাচক প্রচারণা করছে। যারা পরশ্রীকাতর, সবসময় অন্যের দোষ খোঁজে, হতাশায় ভোগে, তারাই ভালো কাজের নেতিবাচক প্রচারণা চালায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে যত ভালো কাজের নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে, প্রত্যেকটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। জনগণকে এসব মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

এ সফরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে

পাঁচ দেশের জোট ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান শেখ হাসিনা। জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা। সম্মেলন শেষে ২৭ আগস্ট দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সফরের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্যাংশন ও কাউন্টার স্যাংশনের এ যুগে এ সফরের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক দক্ষিণে অবস্থানকারী দেশসমূহের উপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্ত এবং বিভাজনের নীতিকে না বলার এখন উপযুক্ত সময়। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা- নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, সভায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছি। একই সঙ্গে আমরা রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিভিন্ন প্রস্তুতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সস্প্রদায়কে অবহিত করেছি।

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণের দেশগুলোর ওপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আমরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নই। সর্বজনীন নিয়মের নামে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অসমনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি দক্ষিণের দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছি।

জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গও উঠে আসে। নির্বাচন ও ভোট প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে সেটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ ভালো পরিবেশে ভোট দিয়েছে, আগামীতে ভালোভাবে ভোট দিতে পারবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে, এটাই বিশ্বাস করি।

বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, এই দলটি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি করে কিছু টাকা যাবে গুলশানে, কিছু যাবে হাওয়া ভবনে, বাকিটা যাবে লন্ডনে। নিজেরা নিজেরা মারামারি করবে, দুর্নীতি করতে করতে এক সময় তারা বলবে আমরা পারবো না। সেই দলকে জনগণ ভোট দেবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতো উন্নয়নের পর জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চায়। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। যা কিছু করেছি, সব তো জনগণের কাজে লাগছে। সবই তো জনগণ ভোগ করছে। মেট্রোরেল করতে গিয়ে আমাদের নানা কথা শুনতে হয়েছে। সব জায়গায় কথা শুনতে হচ্ছে। আর উন্নয়ন করে সবার প্রশংসা পাব, এটা আশা করিও না। আশা করাও ঠিক হবে না। যাদের এক সময় জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা তো এখন সমালোচনা করবেই।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণের জন্য কাজ করছি, জনগণের জন্য আছি, ১৪ বছরের মধ্যে দেশকে কোথায় নিয়ে এসেছি, সেটাও দেখতে হবে। টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের দ্রুত একটি পরিবর্তন আনা সহজ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সুদূরপ্রসারী প্ল্যান করে রাখে। যখনই ক্ষমতায় আসি সেগুলো নিয়ে কাজ করি। ডিজিটাল রূপকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশে গরীব মানুষ একটাও থাকবে না।

আত্মবিশ্বাস থাকলে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন হলেও এখানে অন্যান্য আরও অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এক পর্যায়ে উঠে শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রসঙ্গও। এ সময় তাকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ভদ্রলোকের যদি এতোই আত্মবিশ্বাস থাকে যে তিনি অপরাধ করেননি, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।

তিনি বলেন, যারা বিবৃতি দিয়ে তার বিচার স্থগিত করতে বলেছেন তাদের বলছি, বিবৃতি না দিয়ে আইনজীবী পাঠাক। এক্সপার্টরা দেখুক, অনেক কিছু পাবেন। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সবকিছুই আইন মতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স (কর) না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়… আমাদের কি সেখানে হাত আছে যে মামলা বন্ধ করে দেবো?

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *