বরিশাল বিভাগে এক বছরের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি। যদিও বেসরকারি সংস্থার জরিপ আমলে নেয় না সরকারি দপ্তর। যে কারণে দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র সরকারের উচ্চ মহলে পৌঁছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্ঘটনাকে শ্রেণিভুক্ত করে হতাহতদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান তথ্য লুকিয়ে প্রকৃত চিত্র আড়াল করতে চাইছে। এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করে প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, নীতিমালার বেড়াজালে আটকে থাকার কারণে তথ্যের তারতম্য হচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনার যে কয়টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে ওভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক অন্যতম। তবে পথচারীদের সচেতনতার অভাবও রয়েছে। এসব কারণের সঙ্গে বরিশাল বিভাগে যুক্ত হয়েছে অপ্রশস্ত সড়কের বিপদ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কয়েকগুণ গাড়ির চাপ বাড়লেও দুই লেনের সড়ক চার লেনে উন্নীত না করায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছেই।
২৯ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করে চলা বেসরকারি সংস্থা নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)- এর তথ্য বলছে- ২০২২ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৫১টি। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০৯০ জন। নিহত হয়েছেন ৪৮৬ জন।
এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ১৬৮টি দুর্ঘটনায় ১৮৩ জন নিহত ও ৫৫৫ জন আহত হন। ঝালকাঠিতে ২২টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। পটুয়াখালীতে ৫২টি দুর্ঘটনায় ৫৩ জন নিহত ও ৬৯ জন আহত হন। পিরোজপুরে ৪৭টি দুর্ঘটনায় ৫৪ জন নিহত ও ৪২ জন আহত হন। বরগুনায় ৪৫টি দুর্ঘটনায় ৪০ জন নিহত ও ১১৭ জন আহত হন এবং ভোলায় ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত ও ৭২ জন আহত হন।
নিসচার কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আজাদ হোসেন বলেন, আমরা গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং বিভিন্ন থানা থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করি। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হয় সড়কে। দুর্ঘটনা কমাতে হলে মহাসড়ক থেকে অবৈধ যান উঠিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সড়ক লাগোয়া হাট-বাজার বন্ধ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে।
এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ২৫টি দুর্ঘটনায় ১০৪ জন আহত ও ৪৫ জন নিহত হন। ঝালকাঠিতে ৬টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও আহত ২ জন হন। পিরোজপুরে ৪টি দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও আহত হন ৬ জন। পটুয়াখালীতে ১৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৫ জন ও আহত হন ৬৩ জন। বরগুনায় ৯টি দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জন ও আহত হন ২২ জন। ভোলায় ১০টি দুর্ঘটনায় নিহত ৯ জন এবং আহত হন ৮ জন।
সরকারি ও বেসরকারি তথ্যের তারতম্যের বিষয়ে বিআরটিএর বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, দুই ধরনের তথ্য হওয়াটাই সঙ্গত। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা বৈধ যানবাহনের দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহে রাখি। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অবৈধ যানবাহনের দুর্ঘটনার তথ্যও সংযুক্ত করে। যে কারণে তথ্যের তারতম্য হবে।
তিনি বলেন, সরকারি নীতিমালায় নসিমন-করিমন বা থ্রি-হুইলার কোনো যানবাহনই না। ফলে ওই পরিবহনে দুর্ঘটনা ঘটলে তা নীতিমালা অনুসারে আমরা গ্রহণ করতে পারি না। তবে সরকার এগুলোর বিষয়ে নীতিমালা করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নীতিমালা হলে আমরা তা সংযুক্ত করতে পারব।
এই কর্মকর্তা বলেন, দুর্ঘটনার তথ্য আমরা বিভিন্ন থানা থেকে সংগ্রহ করি। এছাড়া স্থানীয় দুটি ও জাতীয় ৮টি দৈনিকে প্রকাশিত দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করি।