- বড় পরিবর্তন না আসার সম্ভাবনা বেশি
- জাতীয় নির্বাচনের পর আগাম সস্মেলনের আভাস
- সাধারন সম্পাদক পদে ১০ জন প্রার্থী
রাত পোহালেই দেশের প্রাচীন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলন সামনে রেখে গঠিত ১১টি উপকমিটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অবয়বে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলনের মঞ্চ। মঞ্চের আশপাশের সাজসজ্জার কাজও শেষ। আজ শুক্রবারের মধ্যে নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় চলে আসবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা। যান চলাচলের দিক নির্দেশনা দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ।
বৃহস্পতিবার দুপরে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করে সার্বিক প্রস্তুতির অবস্থা তুলে ধরেন। তারা বলেন, প্রস্তুতি শেষ এখন অপেক্ষা মাহেন্দ্রক্ষণের।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সম্মেলন সামনে রেখে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল, মাঠের বিরোধী দল এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এবার বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না বলে দলের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সন্ধ্যা ৬ টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সবশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, কাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৪৪ ফুট প্রস্থ ও ৭ ফুট উচ্চতার মঞ্চ বানানো হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য বানানো হয়েছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার সারিতে ১২০টি চেয়ার রয়েছে। প্রথম সারিতে বসবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দ্বিতীয় সারিতে উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা বসবেন। তৃতীয় ও চতুর্থ সারিতে বসবেন অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তত উপকমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম জানান, সম্মেলন মঞ্চে মওলানা আবুদল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগিশ ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছবি থাকবে। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুুুতুলের ছবিও থাকবে।
তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনী পর্ব খুবই আকর্ষণীয় হবে। নেত্রীর সঙ্গে আমাদের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পতাকা উত্তোলন এবং পায়ড়া উড়াবেন। মঞ্চের সামনে প্রায় ৩৩ হাজার চেয়ার বসানো হয়েছে। সম্মেলনস্থলে বিভিন্ন স্টল থাকবে। শৌচাগার আছে দুই শতাধিক। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকবে। কাউন্সিলে প্রবেশের জন্য ৫টি ফটক থাকবে।’
অভ্যর্থনা উপ-কমিটি জানিয়েছে, সম্মেলনে সারাদেশ থেকে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি হিসেবে প্রায় ১৫ হাজার নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর বাইরে রাজনীতিক, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং কূটনীতিকদের বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হবে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এবারের সম্মেলনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত হবে। সম্মেলনের গান হলো- ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
এর আগে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয় দুই দিনব্যাপী। এবার কৃচ্ছ্রসাধনে তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগের (২০১৯) সম্মেলনে খরচ ধরা হয় ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবারের বরাদ্দ ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এদিকে সম্মেলনের ‘ডেলিগেট কার্ড’ বিতরণ করেছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বুধবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে কার্ড বিতরণ শুরু হয়। এবারের সম্মেলনে সারাদেশ থেকে ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক ডেলিগেট অংশগ্রহণ করবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সম্মেলন সামনে রেখে সব কার্যক্রম হচ্ছে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। যে কারণে গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় নেই। অন্যদিকে নেতাকর্মীদের পদচারণায় দিনভর মুখর থাকছে ধানমন্ডি।
সম্মেলন পরিদর্শনে গিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময়ই একটি স্মার্ট দল। স্মার্ট বাংলাদেশও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হবে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ সম্মেলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলছেন দলটির নেতারা তবে এ সম্মেলন থেকে যে কমিটি গঠন করা হবে, তাতে বড় পরিবর্তন না আসার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের পর আগামী সম্মেলন হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে এবারের সম্মেলন ঐতিহাসিক সম্মেলন হবে এবং নেতাকর্মীদের ঢল নামবে বলে মনে করছেন টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা এ নেতা। গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মাঠ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শনের আগে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এ সম্মেলনে যে কমিটি হবে, সেখানে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। নির্বাচনের পর আবার সম্মেলন হতে পারে। তখন একটা মেজর হিসাব হতে পারে। আপাতত বড় কোনো পরিবর্তনের ব্যাপারে ভাবছি না।
তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে সুসংগঠিত ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে চাই। আগামীতে সরকার পরিচালনার জন্য আমরা প্রস্তুত। সভাপতি আমাদের অপরিহার্য। যিনি (শেখ হাসিনা) সভাপতি তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। এ মতের ভিন্ন একজন কাউন্সিলরও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।
দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার জানা মতে দলে সেক্রেটারি হওয়ার মতো অন্তত ১০ জন অভিজ্ঞ নেতা আছেন। কে হবেন, সেটা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিলরদের মতামত। সবকিছুর প্রতিফলন ঘটবে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে।
সংবাদটি শেয়ার করুন,