কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের বাইরে ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ’ নামে কলকাতার একটি ধর্মীয় সংগঠনের সহিংস বিক্ষোভের পর এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দেশটিতে কূটনীতিক এবং অ-কূটনৈতিক বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন (দূতাবাস) ও কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার কথা জানানো হয়েছে।
কলকাতা পুলিশ সূত্র জানায়, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতদিন বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে যে সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়ন থাকতো, সেই সংখ্যা অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। দিল্লিতেও বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ’ নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন সহিংস বিক্ষোভের ডাক দেয়। বিক্ষোভকারীদের একটি বড় দল আয়োজিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সীমানায় পৌঁছে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের উদ্বেগের কথা জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে দেয়।
এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, তবে উপ-হাইকমিশনের সব সদস্যের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর নিন্দনীয় কাজের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
যে কোনো হিংসাত্মক কার্যকলাপের নিন্দা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন এবং ভারতে বাংলাদেশের অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনগুলোর পাশাপাশি এর কূটনীতিক এবং অ-কূটনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় সরকার।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গতকালের ওই ঘটনার পরই উপ-দূতাবাসের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা পুলিশ। এখন থেকে কলকাতার উপ-হাইকমিশনে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নজরদারি করবেন। এছাড়াও থাকবেন দুজন ইন্সপেক্টর। ছয় জন করে এএসআই এবং এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাও দায়িত্ব পালন করবেন। নারী ও পুরুষ মিলিয়ে ৩০ জন লাঠিধারী কনস্টেবল থাকবেন উপ-দূতাবাসের বাইরে।
এছাড়াও নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলেও জানিয়ে সূত্রটি। হাইকমিশনের বাইরে মোতায়েন করা হয়েছে দিল্লি পুলিশের র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। হাইকমিশনের সামনে যে কোনও জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে ভারতীয় ন্যায়সংহিতার ১৬৩ ধারা।