বিমানবন্দরে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরির ঘটনায় গুদামে ছিল না সিসি ক্যামেরা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের গুদামে থাকা লকার থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং হেফাজতে নেওয়া চার সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে সোনা রাখার গুদাম সিসিটিভির আওতায় ছিল না। ফলে কে বা কারা সোনা গায়েব করেছে তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। এর সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি থাকে। এছাড়া বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। এত নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে সোনা চুরি হওয়া এবং কাস্টম হাউসের গুদামে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকার বিষয়টি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সোনা চুরির এই ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর)। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় পরদিন রোববার। বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদামে দিনভর ইনভেন্টরি শেষে ৫৫ কেজি সোনা চুরি বা বেহাত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করে মামলার কথা জানানো হলেও আসলে মামলা হয়েছে অজ্ঞাতদের আসামি করে। পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য যুগ্ম-কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে কাস্টম হাউস।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় এ বিষয়ে মামলা করেন।

মামলার কপি সংগ্রহের পর জানা যায়, মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের। শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কে বা কারা গুদামের আলমারি লকার ভেঙে সোনাগুলো নিয়ে যান বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। শুল্ক বিভাগ বলছে, চুরি হওয়া এই সোনার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার কাছে শুল্ক বিভাগের গুদামের মূল্যবান পণ্য সামগ্রী রাখার একটি স্টিলের আলমারির লক ভাঙা বলে জানান।

তিনি যুগ্ম কমিশনারকে আরও জানান, প্রতিদিনের মতো আটক ও জব্দ হওয়া পণ্য গুদামে রেখে তিনিসহ চারজন রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুল্ক বিভাগ ছেড়ে চলে যান।

গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে ওই গুদাম পরিদর্শনে যান ঢাকা শুল্ক বিভাগের কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ঢাকা কাস্টম হাউসে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। গোডাউন পরিদর্শনে গিয়ে গোডাউনের ভেতরে একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান এবং গোডাউনের পূর্বপার্শ্বের ওপরের দিকে এসির বাতাস বের হওয়ার টিনের কিছু অংশ কাটা দেখতে পান। একইসঙ্গে তিনি গোডাউনে কর্মরত এ, বি, সি ও ডি শিফটের কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকরাম শেখ (সবাই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা) এবং রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার নামে চার সিপাহিকে আলমারির লক ভাঙার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কেউ কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।

মামলার এজাহারে উল্লেখিত তথ্য মতে, গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম থেকে কোনো মূল্যবান বস্তু চুরি হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হতে গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেন। পরে দিনভর গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা পণ্য আটকের রসিদ (ডিএম) মোতাবেক দেখতে পান ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জব্দ করা ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা চুরি হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুরির ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এই চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে গুদামের দায়িত্বরত চার সিপাহি রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরের ভেতরের গুদামের দায়িত্ব পালন করেন চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহি। তাদের মধ্যে চার সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তারা হলেন মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকতার শেখ। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, গায়েব হওয়া সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী এসব সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে যাওয়ার কথা, এখানে থাকাটা প্রশ্নের উদ্রেক করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সোনা রাখার গুদাম ঘর পরিদর্শন করেছি। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সিসিটিভির আওতায় ছিল না, এটি অবাক করার মতো বিষয়। সিসিটিভি না থাকায় কে বা কারা সোনা সরিয়েছে তা স্পষ্ট করা যাচ্ছে না। সিসি ক্যামেরা থাকলে বের করা সহজ হতো কারা সোনা সরিয়েছে।

অন্যদিকে কাস্টম হাউজের গুদামের বাইরে থাকা সিসি ক্যামেরাও নষ্ট পাওয়া গেছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার নুরুল হুদা আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। এজন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

ঢাকা কাস্টম হাউসের একটি সূত্র বলছে, গুদামে আনুমানিক ২০০ কেজির বেশি সোনা ছিল। যার মধ্যে ৫৫ কেজির বেশি চুরি হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *