স্রষ্টার ইচ্ছায় অজানা রোগে ৩ বছর বয়সে আরিফের জীবনে নেমে আসে পঙ্গুত্ব। জীবনের সাথে যুদ্ধ করেই পার করেন প্রতিটি দিন। নিজের বাড়ি থেকে জীবিকার জন্য যেতে হয় ২ কি.মি দূরে। ঘর থেকে বের হলেই সর্ব প্রথম তাকে মুখোমুখী হতে হয় একটি খালের( নদীর)। সেই খাল পার হতে ব্যবহার করতে হয় বাঁশের সাকো। জীবনের ৪৫টি বছর পার করছেন এই সাকোর সাথে যুদ্ধ করে। জীবন যুদ্ধে হার না মানা এ গল্প মাদারীপুর সদর উপজেলার আরিফ মাতুব্বর।
আরিফ মাতুব্বর মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মাদ্রা গ্রামের আজিজ মাতুব্বরের ছেলে। যুবক বয়সে সাকো কষ্ট করে পার হতে পারলেও বয়সের ভাড়ে এখন খুব কষ্ট হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে চলাচলের জন্য তার দাবি একটি সেতু।হামাগুড়ি দিয়ে সহজ সরল রাস্তায়ও যার চলতে কষ্ট হয় তাকে প্রতিদিন পার হতে হয় বাঁশের সাকো। তার কথা বিবেচনা করে ও গ্রামের জনসাধারনের চলাচলের জন্য একটি সেতু খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের কাছে স্থানীয়দের আবেদন একটি সেতু। সেতুর ব্যবস্থা হলে প্রতিবন্ধী আরিফ মাতুব্বরসহ স্থানীয়দের চলাচলের দূর্ভোগ লাঘব হবে। ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দাবি করা হয় সেতুর জন্য। তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সূত্রে জানা যায়,ছোটবেলা থেকে অজানা রোগে আক্রান্ত হয় আরিফ। পরে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় তার দুটি পায় অচল হয়ে পড়ে । তার পরিবার অসচ্ছল থাকার কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি। আর এ কারণেই তার দুটি পা অকেজো হয়ে পরে। এখন তার হাতে ভর দিয়েই চলাফেরা করতে হয়। কিন্তু বাড়িতে থেকে কাজে বের হলে প্রথমে বাঁশের সাকো পার হতে হয়।আর সেই বাঁশের সাকো পার হতে হয়। হাতে ভর দিয়ে।তার বাড়ি থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ হেটে যেতে হয় কর্মস্থানে ।
অনেক কষ্ট করে যেতে হয় ২ কিলোমিটার দূরে রাস্তার পাশে থাকা ছোট মুদি দোকানে। স্থানীয়দের দাবি সরকারের কাছে আকুল আবেদন এই প্রতিবন্ধী আরিফ মাতুব্বর ও এলাকাবাসীর যাতায়াতের সুবিধা জন্য একটি সেতু বা কালভার্ট করে দেওয়ার জন্য।
প্রতিবন্ধী আরিফ মাতুব্বর বলেন, আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে অনেক কয়েক বার এই সাঁকো থেকে খালের ভিতরে পানিতে পড়ে গেছি। এখন আমার বয়স অনেক হয়ে গেছে। আগের মতো আমি আর সাঁকো পার হইতে পারি না।
সরকার ও বিত্তবান লোকের কাছে আমার একটি দাবি এখানে আমাকে একটি কালভার্ট বা একটু সেতু করে দেয়।তারা যদি আমাকে একটি সেতু বা কালভার্ট করে দেয় তাহলে আমি আমার কর্ম স্থানে সহজেই যেতে পারবো।
স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবুর রহমান মাতুব্বর বলেন, আরিফ মাতুব্বর পঙ্গু মানুষ। আর এখন চলাচল করতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের সরকারের কাছে দাবি সরকার যেন এখানে একটা ব্রীজ করে দেয়।
তার প্রতিবেশী মফিজুর ইসলাম সান্টু বলেন,রাতে দোকান করে যখন বাসায় ফেরার পথে অনেকবার এই বাশেঁর সাঁকো থেকে খালের মধ্যে পড়ে গেছে। রাতে ওই পথচারীরা তার চিৎকার শুনে এসে তাকে উদ্ধার করে। হাতে ভর দিয়ে বাঁশের সাকোতে হাটা বড় কষ্টের ব্যাপার। এভাবে সাকো পার হতে গিয়ে কতোবার পড়ে হাত বা শরিরের বিভিন্ন অংশ কেটে গেছে। কখন পড়ে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। আল্লাহ যানে,সরকার এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমাদের দাবি এ খালের উপর একটি ব্রীজ বা কালভার্ট করে দেয়।তাহলে সে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পারবে ও চলাচলের সু ব্যবস্থা হবে এ এলাকায় সাঁকো দিয়ে পার হওয়া অর্ধশত পরিবারের।
আরিফের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, শীতের শিশির আর বৃষ্টির পানিতে সাঁকোর বাঁশ ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় আমার স্বামী কয়েকবার পড়ে গেছে।সে এমনই পঙ্গু মানুষ। এ সাঁকো পারাপার হতে গেলে ঘটে দুর্ঘটনা।আর সে সাঁকো পার হইয়া কাজে না যাইতে পারলে।আমরা ছেলে সন্তান নিয়ে না খেয়ে মরে যাব। ঠিক মতো নামাজ পরতে যেতে পারে না। বারবার ইউনিয়ন পরিষদকে বললেও কোন কাজ হচ্ছে না।তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন।সরকার যেন আমার পঙ্গুর স্বামী ওই এলাকাবাসীর দিকে তাকিয়ে একটা সেতুর ব্যবস্থা করে দেয়।
পথচারী রুবেল বলেন,কয়েকদিন আগে রাত নয়টার দিকে আরিফ ভাই সাকো পার হতে গিয়ে খালের মধ্যে পানিতে পড়ে গেছে। তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌছায় দেই। এখানে জরুরী একটি ব্রিজ না হলে।কবে জানি এভাবে সাঁকোতে পড়ে মারা যায়।
৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিন্টু মোল্লা বলেন,আরিফ প্রতিবন্ধী লোক।অনেক কষ্ট করে বাশেঁর সাকো পার হতে হয়। আমরা এই বিষয়টিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি তারা বিষয়টি দেখবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী আরিফের বিষয়টা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এখন আমাদের কাছে যদি তারা আবেদন করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে একে একটা ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখবো।
সংবাদটি শেয়ার করুন