পাটের ভালো ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা, উৎপাদন খরচের অর্ধেক দাম, বিপাকে পাটচাষিরা

মেহেরপুরে চলতি মৌসুমে পাটের ভালো ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা। পাট জাগ ও দাম নিয়ে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে কৃষকের কপালে। শ্রমিক ও পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় অনেক কৃষকের পাট এখনও ক্ষেতেই রয়ে গেছে। পাট বিক্রির টাকা দিয়ে মাঠ থেকে পরিবহণ খরচ, জাগ দিতে পানির ভাড়া ও আশ ছাড়ানোর যে খরচ তা পাট বিক্রি করে উঠে আসছে না। খরচের বাকি অর্ধেক টাকা গুনতে হচ্ছে পকেট থেকে। এ বছর পাটের তেমন ক্রেতা না থাকায় কৃষকরা পাইকারদের কাছে কমদামেই পাট বিক্রি করতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছেন।

বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মণ পাট ঘরে তুলতে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ পাট ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করতে লোকসানেই পাট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের কৃষকের অর্থকরী ফসল সবজির পাশাপাশি পাট চাষ। গত দুই বছরে কাঙ্ক্ষিত দাম পেয়ে এবার অধিক জমিতে পাট চাষ করেছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় প্রায় ২২ হাজার ৭৩৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। জেলায় এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২১ হাজার হেক্টর। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১২ থেকে ১৪ মণ পর্যন্ত। 

মেহেরপুরে এ বছর তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আশপাশের কৃষকরা পাট কেটে জাগ দিতে পারেনি। পরে অনেকেই স্যালোমেশিন দিয়ে পানি সরবরাহ করে পাট জাগ দিয়েছেন। অনেকেই এখনও পাট কেটে রেখে দিয়েছেন জাগ দিতে পারেননি। সাধারণত পাটের মৌসুম শেষ হলে কৃষকরা জমিতে ধান আবাদ করে থাকেন। কিন্তু জাগ দেওয়ার সমস্যা, শ্রমিক সংকট ও বাজারে প্রত্যাশিত দাম না থাকায় অনেকে পাট বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে বীজতলা প্রস্তত থাকলেও চাষিদের অনেকে এখনও ধান রোপণ করতে পারেননি। এতে কৃষকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

কাথুলী ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের কৃষক বলেন, গত দুই বছরে পাটের দাম ভালো থাকায় এ বছর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনি চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। বীজ রোপণ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রতিমণ পাট ঘরে তুলতে প্রায় ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা খরচ হয়েছে। সে পাট এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। কাচা পাট বিক্রি হচ্ছে প্রতিবেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। তবুও ক্রেতা নেই। লোকসান দিয়েই পাট বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের।

ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছরই পাটের দাম সবচেয়ে কম। পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার। এসব কষ্ট সুখে পরিণত হতো, যদি পাটের ভালো দাম পাওয়া যেত। এখন তো পাট গলার ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। পাটের দাম বৃদ্ধি করা না হলে অনেক কৃষককে পথে বসতে হবে। জীবনে আর পাটের আবাদ করবেন না বলেও জানান তিনি।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, অন্যান্য বছর দাম ভালো হওয়ায় এ বছর সে আশায় কৃষকরা পাট চাষ করেছেন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। পানির অভাবে কৃষকদের পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হলে এ সমস্যা থাকবে না। বর্তমানে পাটের দাম নেই। কৃষকরাও হতাশ। তবে পাটের দাম কিছু দিনের মধ্যে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *