উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেলেও, তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলার পানি কিছুটা কমেছে। পানি কমলেও ধরলা বিপৎসীমার খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তিস্তা নদীর পানি গত ছয় দিন থেকে বিপৎসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে তলিয়ে গেছে জেলার প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা।
পানি বাড়ার ফলে জেলার চরাঞ্চলগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামীণ কাঁচা পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেকে নৌকায় করে যাতায়াত করছেন গন্তব্যে। চরাঞ্চলের চারণভূমি তলিয়া যাওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তলিয়ে আছে শত শত বিঘা জমির আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন শাক-সবজি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব অঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার, দুধকুমার পাটেশ্বরী পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের সিতাইঝাড় এলাকার আজগার আলী বলেন, এবার নিয়ে দুই বার আমার আমন আবাদ নষ্ট করে দিলো বন্যা। প্রথমে একবার ধান রোপণ করলাম পানি এসে নষ্ট হয়ে গেল। এবারও ধান রোপণ করলাম পানি এসে নষ্ট হয়ে গেল। আর ধান রোপণ করবো না এ বছর। কারণ হাতের অবস্থা খুবই খারাপ। জমিতে ধান লাগানোর মতো সামর্থ্য নেই।
একই ইউনিয়নের গারুহারা এলাকার মঞ্জু মিয়া বলেন, পানি বৃদ্ধির কারণে আমাদের এখানকার সব রাস্তা তলিয়ে গেছে। এখন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে আমরা নৌকায় যাতায়াত করছি।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের আফরোজা বেগম বলেন, আজ পাঁচ দিন থেকে বন্যার পানিতে নলকূপ ও টয়লেট তলিয়ে আছে। খুব সমস্যায় পড়ে আছি। আমাদের চরের মানুষের খুব কষ্ট।
ইউনিয়নের ঝুনকার চরের আনোয়ার হোসেন বলেন, এখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। কিন্তু বাড়ির চারিদিকে পানি, বের হতে পারছি না। দীর্ঘদিন থেকে পানি থাকার কারণে কাজকর্ম নেই। পরিবার নিয়ে খুব বিপদে আছি।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, আমার এলাকার কয়েকটা চরে ব্রহ্মপুত্রের পানিতে প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দি। সরকারের থেকে ৪ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, আমার ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার প্রায় ২০০-৩০০টির মতো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শৌচাগারের সমস্যাটা বেশি দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, বন্যার পনিতে তলিয়ে গেছে ৫ হাজার ৩২৮ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত, ৬৭ হেক্টর জমির বীজতলা ও ২৮৮ হেক্টর জমির বিভিন্ন শাক-সবজি। বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি কিছুটা কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যার জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬২ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ নগদ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলাভিত্তিক চাহিদামতো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেসব বিতরণের কাজ চলমান এবং শিশুখাদ্য বাবদ ২ লাখ ও গো-খাদ্য ক্রয় বাবদ ৫ লাখ টাকা মজুত আছে।