রিজার্ভ কমে আসা এবং ডলার সংকটের কারণে ডলারের বিকল্প মুদ্রার কথা বাংলাদেশে ভাবা হচ্ছিল গত বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকেই। কিন্তু এখনো ডলারের বিকল্প কোনো মুদ্রা সেই অর্থে বাংলাদেশে চালু হয়নি।
চীনা মূদ্রা ইউয়ানে এলসি খোলার অনুমতি দেয়া হলেও তাতে কোনো সাড়া মিলছে না। রাশিয়ান মুদ্রা রুবল এবং ভারতীয় মুদ্রা রুপি নিয়েও চিন্তা করা হচ্ছিল, কিন্তু রুবলের বিষয়টি তেমন এগোয়নি। এখন ভারতীয় মুদ্রা রুপি সক্রিয় বিবেচনায় আছে।
জানা গেছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে টাকা ও রুপিতে লেনদেনের ব্যাপারটি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের প্রধানদের নিয়ে শিগরিই একটি বৈঠক করবে। প্রথম দিকে সরাসরি মুদ্রায় লেনদেন না করা হলেও ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডে করা যায় কী না— ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের মুদ্রা ভারতে এবং ভারতের মুদ্রা বাংলাদেশে বিনিময়যোগ্য করার ব্যাপারটিও বিবেচনায় আছে দুই দেশের কর্মকর্তাদের। সেক্ষেত্রে অবশ্য দুই দেশকে বিনিময় হার নির্ধারণ করতে হবে এবং তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের ভারসাম্যের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। কোনো দেশ যাতে এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার উপায় নির্ধারণও করতে হবে। বিনিময় হার হবে ভাসমান। এটা কোনো নির্ধারিত হারে হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, ‘রুবল নিয়ে আমাদের তেমন কোনো প্রচেষ্টা ছিল না। তবে ভারতীয় মুদ্রার সঙ্গে এশিয়ান ক্লিয়ারিং সিস্টেমের (আকু) মাধ্যমে আমাদের টাকার বিনিময়ের একটা চেষ্টা ছিলো আগে থেকেই। এখন সেটা আমরা আরো জোরদারভাবে চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি দুই দেশের মধ্যে ডলার বাদ দিয়ে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেন করতে।’
বাংলাদেশে এখন আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের পাশাপাশি ইউরো ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে রিজার্ভ কমে এখন ৩১ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। এদিকে রাশিয়ার ওপর সুইফটের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছেনা বাংলাদেশ। কিন্তু পাওনা পরিশোধের চাপ আছে। রাশিয়া ‘কারেন্সি সোয়াপের’ মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের প্রস্তাব দিলেও নিষেধাজ্ঞায় পড়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশ তাতে রাজি হয়নি। কারেন্সি সেয়াপ হলো সুইফট পদ্ধতি এড়িয়ে নিজ নিজ দেশের মুদ্রায় লেনদেন করা। তাই রাশিয়া এখন চাইছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণের কিস্তি ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বাংলাদেশ যেন তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিশোধ করে। আর এটা করতে হলে বাংলাদেশকে ডলারই গুণতে হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৬ শতাংশ চীন এবং ১৪ শতাংশ ভারত থেকে আসে। অন্যদিকে দেশের মোট রপ্তানির মাত্র ৩ শতাংশ যায় এই দু’টি দেশে।