জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগের বরখাস্ত হওয়া কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) মো. হাফিজুর রহমানের দায়ের করা মামলায় আপিলে গিয়েও হেরে যায় এনবিআর। এর পেছনে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তা ও এক আইনজীবীর দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য তাদের ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২২ জানুয়ারি এনবিআরের বোর্ড প্রশাসন থেকে এ নোটিশ ইস্যু করা হয়।
এনবিআরের বোর্ড প্রশাসন-১ এর দ্বিতীয় সচিব কাজিয়া সুলতানার জারি করা পৃথক নোটিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শাস্তির মুখোমুখি আইনজীবী ও এনবিআরের কর্মকর্তারা হলেন—রিটেইনার অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুর রশীদ, আইন কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব মো. লিয়াকত আলী এবং শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন-১ এর দ্বিতীয় সচিব মো. শামসুদ্দীন।
তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ সালের ২(খ) এর (অ), (আ), (ই) অনুযায়ী কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর পরিচালক (জনসংযোগ) সৈয়দ এ মু’মেন বলেন, ঘটনাটি আদালত সম্পৃক্ত একটি বিষয়। এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়। এনবিআর আইন ও বিধি অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
ছুটি নিয়ে যথাসময়ে কর্মস্থলে যোগদান না করা, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত হন কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার (বিভাগীয় মামলা রুজুকালীন কমিশনারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন) মো. হাফিজুর রহমান।
গত ২২ জানুয়ারি এনবিআরের বোর্ড প্রশাসন থেকে ইস্যু করা নোটিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশের বৈধতা, ন্যায্যতা ও কার্যকারিতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন (নং-১৩২৩০/২০১৬) দায়ের করেন মো. হাফিজুর রহমান। ২০১৯ সালে সেই রিট পিটিশনের রায়ের নির্দেশনার আলোকে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলা (নম্বর- ২৩১/২০১৯) দায়ের করেন তিনি।
এরপর ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে রায় দেওয়া হয়। রায়ে প্রার্থীকে সরকারি চাকরিতে জ্যেষ্ঠতা ও ধারাবাহিকতাসহ পুনর্বহাল করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সেই রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।
পরে ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে মামলাটি তামাদিতে বারিত উল্লেখ করে খারিজ করা হয়। প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়। পরে আপিল বিভাগ থেকে ২০২২ সালের ২৩শে জানুয়ারি আদেশে নির্ধারিত সময়সীমার ১০৮ দিন বিলম্বে দাখিল হওয়ায় ও বিলম্বে দাখিলের কারণ সন্তোষজনক না হওয়ায় তামাদিতে বারিত উল্লেখ করে আপিলটি খারিজ করা হয়।