ডিজিটাল পেমেন্ট নিরাপদ করতে নতুন নীতিমালা জারি

অনলাইনে পণ্য ও সেবা কেনাবেচা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ধরনের কেনাকাটার মূল্য পরিশোধেও ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল পেমেন্ট। তাই, ডিজিটাল পরিশোধ ব্যবস্থাকে নিরাপদ, কার্যকর, সহজলভ্য করাসহ গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় ‘মার্চেন্ট এ্যাকোয়ারিং ও এসক্রো সেবা নীতিমালা, ২০২৩’ নীতিমালা জারি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুতাসিম বিল্লাহ সাক্ষরিত ওই সার্কুলার বলা হয়, নীতিমালা অনুযায়ী মার্চেন্ট হবে তিন ধরনের। প্রথমটি ফিজিক্যাল স্টোর ভিত্তিক মার্চেন্ট, দ্বিতীয়টি অনলাইন ভিত্তিক মার্চেন্ট ও তৃতীয়টি ফিজিক্যাল স্টোর ও অনলাইন উভয় ভিত্তিক মার্চেন্ট।

যেসব মার্চেন্ট বা বিক্রেতার মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার নিচে তারা মাইক্রো ফিজিক্যাল মার্চেন্ট হিসেবে গণ্য হবে। আর যাদের লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি তারা ফিজিক্যাল রেগুলার মার্চেন্ট হিসেবে গণ্য হবে। আবার যেসব অনলাইন মার্চেন্ট বা বিক্রেতার মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার নিচে তারা মাইক্রো অনলাইন মার্চেন্ট হিসেবে গণ্য হবে। আর যাদের লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি তারা অনলাইন রেগুলার মার্চেন্ট হিসেবে গণ্য হবে। যে সব মার্চেন্ট নিজস্ব ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন বিক্রেতার (মার্চেন্ট) পণ্য ও সেবা প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয় করে, তারা অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে গণ্য হবে।

সার্কুলারে বলা হয়, এ ধরনের ডিজিটাল পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণে পণ্য বা সেবা বিক্রেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কেননা, ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় পণ্যের মূল্য পরিশোধের পর মার্চেন্ট সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে প্রতিশ্রুত সেবা যথাসময়ে সরবরাহ করার জন্য দায়বদ্ধ থাকেন। অপরদিকে পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা মার্চেন্ট এ্যাকোয়ারার ক্রেতার মাধ্যমে বিক্রেতার অনুকূলে পরিশোধিত অর্থ সংশ্লিষ্ট মার্চেন্টের অনুকূলে নিষ্পত্তির জন্য দায়বদ্ধ থাকেন।

এতে আরও বলা হয়, পণ্য ও সেবার মূল্য পরিশোধের পর বিক্রেতা-মার্চেন্ট সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে যথাসময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ করলে ডিজিটাল কমার্স সেবার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। যা ডিজিটাল পরিশোধ ব্যবস্থার প্রসারেও ভূমিকা রাখবে। আবার সরেজমিন উপস্থিতি ছাড়া লেনদেনের সুযোগ গ্রহণ করে অনেক অবৈধ পণ্য বা সেবা বিক্রেতাও মূল্য পরিশোধে বৈধ ডিজিটাল পরিশোধ সেবা ব্যবহার করে প্রতারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, যা রোধে প্রয়োজনীয় নীতি কাঠামো অনুসরণ করা আবশ্যক।

বিক্রেতা বা মার্চেন্টের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও লেনদেনে গ্রাহকের স্বার্থহানিসহ মানি লন্ডারিং ও জালিয়াতির ঝুঁকি থাকে। ফলে, পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (বিকাশ, নগদ, রকেট, ব্যাংক ইত্যাদি) বা মার্চেন্ট এ্যাকোয়ারারকে বেশকিছু তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

সেগুলো হলো- মার্চেন্টের নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র, কেওয়াইসি, পারসোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট, ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), মার্চেন্টের টেলিফোন, মোবাইল নম্বর, মার্চেন্টের ব্যাংক ও এমএফএস, পিএসপি অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যবসায়িক ঠিকানা, ওয়েবসাইট ও ই-মেইল ঠিকানা, মার্চেন্ট যে ব্যবসায় নিয়োজিত তার বিবরণ, বৈধতা, সামাজিক গুরুত্ব, হালনাগাদ পণ্যের তালিকা (অনলাইন মার্চেন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য), অনুমতি আবশ্যক পণ্য ও সেবা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্চেন্টের অনুমতিপত্র, মার্চেন্ট কোনো ব্যবসায়িক সংগঠন বা সমিতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে সে সংক্রান্ত দলিল, এ্যাকোয়ারারের বিবেচনায় অন্য যে কোনো প্রযোজ্য নথি, মার্চেন্ট কর্তৃক প্রদত্ত দলিলাদির অন-লাইনে যাচাই করা প্রমাণক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠান প্রতি অর্থবছর শেষে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সব মার্চেন্টদের ঝুঁকিসমূহ মূল্যায়ন করে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে এবং প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদ বরাবর উপস্থাপন করবে। ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী মার্চেন্টসমূহকে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করতে হবে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ মার্চেন্ট, মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ মার্চেন্ট এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ মার্চেন্ট।

এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠানগুলো মার্চেন্টের ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়মিত তদারকির মধ্যে রাখবে। যদি কোনো ফিজিক্যাল রেগুলার মার্চেন্টের (যাদের মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি) মাসিক লেনদেন প্রবৃদ্ধ ৪০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে তাকে ব্যখ্যা তলব করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শন করে উত্তর সন্তোষজনক না হলে তার লেনদেন স্থগিত করতে হবে। এছাড়া অনলাইনে রেগুলার মার্চেন্ট (যাদের মাসিক লেনদেন ১০ লাখ টাকার বেশি) এর মাসিক লেনদেন প্রবৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অনলাইনের মার্কেটপ্লেসের প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

এছাড়া ওই আইনে একজন গ্রাহক ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানে কিভাবে পণ্য অর্ডার করবে, কিভাবে পেমেন্ট করবে, মার্চেন্টের দায়িত্ব ও কাজ, ব্যাংক বা এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠানের কাজ, এসক্রো বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের করণীয় এবং কোনো জায়গায় বিপত্তি তৈরি হলে তার সমাধান ও জরিমানা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে ক্ষতির ভার কার কাঁধে পড়বে তাও বর্ণনা করা হয়েছে এই নীতিমালায়।

নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও দ্রুতগতির এসক্রো সেবা (পণ্য সরবরাহ বা কুরিয়ার) চালুর লক্ষ্যে এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠান এই নীতিমালা জারি হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাদের এসক্রো সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াকে অটোমেটেড করবে। ডিজিটাল কমার্স লেনদেনে কুরিয়ার সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এ্যাকোয়ারার প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক বা এমএফএস) পণ্য বা সেবা ক্রেতার উপর কোন চার্জ আরোপ করতে পারবে না।

Spread the love

Leave a Reply

Specify Facebook App ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Facebook Login to work

Specify Twitter Consumer Key and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Twitter Login to work

Specify LinkedIn Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for LinkedIn Login to work

Specify Youtube API Key in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Youtube Login to work

Specify Google Client ID and Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Google and Youtube Login to work

Specify Instagram App ID and Instagram App Secret in the Super Socializer > Social Login section in the admin panel for Instagram Login to work

Your email address will not be published. Required fields are marked *