চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ আসে। এরপর এই মাছ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। চাঁদপুর ঘাটে অন্য মাছের তুলনায় ইলিশ মাছের পরিমাণই বেশি। এসব ইলিশ দক্ষিণাঞ্চলে সাগর, ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালি ও সন্দীপ থেকে আসে। তবে এবার ভরা মৌসুমেও ঘাটে পদ্মা-মেঘনার ইলিশের দেখা নেই বললে চলে। অল্প সংখ্যক নদীর ইলিশ এলেও দাম চড়া। ফলে আসল রুপালি ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা বলেন, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ কিনতে এসে দেখি এখানকার ইলিশ একেবারেই কম। ফলে অন্য জায়গা থেকে আসা ইলিশ কিনে নিতে হচ্ছে। অনেক দূর থেকে আসছি তাই খালি হাতে ফিরে যেতে চাই না। তবে দাম অনেক বেশি। তবে স্থানীয় অনেক ক্রেতা মাছ না কিনে খালি হাতে ফিরে গেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঁদপুর মাছঘাটে ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে ঘাটে ইলিশ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রতিটি আড়তের সামনে কম-বেশি ইলিশের স্তূপ। কেউ বরফ ভেঙে প্যাকেটজাত করছেন, আবার কেউ ইলিশ সরবরাহের কাজ করছেন। মাছের দাম চড়া থাকায় ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক কম ছিল।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ ঘাটে বর্তমানে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ২২ হাজার টাকা, ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি আটশো টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি সাড়ে আটশো থেকে নয়শো টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৪৫ হাজার টাকা, ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা , ১১০০ থেকে ১৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৬৫ থেকে ৬৬ হাজার টাকা, দেড় কেজি ওজনের প্রতি মণ ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা, যার প্রতি কেজি ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে পাইকারিতে বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয় ক্রেতা ওসমান বলেন, ঘাটে প্রচুর মাছ আছে। কিন্তু মাছের দাম অনেক বেশি তাই ইলিশ না কিনেই ফিরে যাচ্ছি।
মনিরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি কুমিল্লার নাঙ্গল কোট থেকে এসেছি। মাছের দাম আছে মোটামুটি। কিন্তু মানুষের হাতে টাকা কম। যার কারণে মাছের দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে। ক্রেতাদের উপস্থিতিও কম। আমি আরও কয়েকবার এসেছি। তখন ক্রেতা অনেক বেশি ছিল। মাছের দাম আরও কমলে মানুষের নাগালের মধ্যে আসবে।
ক্রেতা রাজিব জানান, আমি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগাচর থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশ কিনতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি চাঁদপুরের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
ইলিশ ব্যবসায়ী নুর নবী জানান, চাঁদপুরের ইলিশ অনেক স্বাদ, দামও বেশি। বাইরে থেকে আসা ইলিশের দাম চাঁদপুরের ইলিশের তুলনায় কম। প্রতি কেজি প্রায় ২০০ থেকে আড়াইশো টাকার ব্যবধান। দূরদূরান্ত থেকে যে সকল ক্রেতারা আসে তারা চাঁদপুরের ইলিশ চেনেনা। তারা কম দামে ইলিশ কেই চাঁদপুরের ইলিশ মনে করে।
মেসার্স আলম ট্রেডার্সের মালিক নুরুল আমিন বলেন, আজকে ২ থেকে আড়াই হাজার মণ মাছ এসেছে। তুলনামূলক মাছের দাম অনেক বেশি। তবে গতবারের তুলনায় মাছ অনেক কম। যার কারণে মাছের দাম একটু বেশি।
চাঁদপুর ফিসের মালিক মাসুদ রানা জানান, এখন ক্রেতা কম মাছের দাম একটু বেশি। কারণ তেলের দামের উপর মাছের দাম নির্ভর করে। গত মৌসুমে তেলের দাম কম থাকায় মাছের দামও কম ছিল। এবার তেলের দাম বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে। জেলেরা প্রতিদিন রোট, ট্রলারে তেল পুড়িয়ে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু তারা প্রতিদিন তো মাছ পায় না। তেলের দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। যাবতীয় খরচ দিয়ে যে মাছ পান তা বিক্রি করে তাদের লাভ হয় না। যার কারণে মাছের দাম বেশি হয়। সব মিলে জেলে ও ব্যবসায়ীদের তেমন লাভ হয় না।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার বলেন, আজ অনেক ইলিশ ঘাটে এসেছে। তবে ইলিশের নব্বই ভাগই বাইরের। আজকে মাছঘাটে আমদামি হয়েছে এক হাজার থেকে ১২০০ মণের মতো। এরমধ্যে মাত্র ২০০ মণ চাঁদপুরের লোকাল মাছ। গতকালের তুলনায় মাছের দাম একটু কম। সামনে মা ইলিশের অভিযান শুরু হবে। সবমিলে সামনের এক মাস যদি ভরপুর ইলিশ না থাকে তাহলে আমাদের লোকসানে পড়তে হবে। দিন দিন মাছের উৎপাদন কমছে। প্রতিবছর যদি এভাবে মাছ কমে যায় তাহলে আমাদের ব্যবসা চালানো কঠিন।